রাষ্ট্রপতি ফ্যাসিবাদের প্রডাক্ট হলেও তাকে পদত্যাগের কথা বলে বড় ধরনের সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী।
শনিবার বিকেলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় লিফলেট বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘আজকে রাষ্ট্রপতির বিষয় নিয়ে কথা উঠেছে। আমরা সবাই জানি এই রাষ্ট্রপতি ফ্যাসিবাদের একটি প্রডাক্ট।
আপনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন ছোটখাটো যদি গর্ত হয় আপনি সেই গর্ত টপকিয়ে পার হয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু বড় গর্ত যদি খাল হয় তখন তো সেটা টপকানো সম্ভব নয়, সেটা টপকাতে গেলে পড়ে যেতে পারেন। সুতরাং যাতে কোনো সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য অনেক চিন্তা করে কাজ করতে হবে। অল্প শূন্যতা হলে সেই শূন্যতা ভরাট করে দেয়, কিন্তু বড় শূন্যতা হলে ওটা ভরাট করা মুশকিল হয়; এখানে শেখ হাসিনার পতনে যারা অসন্তুষ্ট হয়েছে বাংলাদেশের ভেতরের কিছু মানুষ এবং বাহিরের লোকজন নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে মেতে উঠবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘একটি পরিস্থিতি একটি দুনিয়া কাঁপানো বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে তারা নিশ্চয়তা দেবে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের। সেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা তাদের দরকার। এর মধ্যে সংস্কারের যে কথাগুলো উঠেছে সেই সংস্কার তারা করবে, কিন্তু কথা হল সেটা তারা কত দিনে করবে?’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এ দেশের জনগণ রাজনৈতিক দল, যারা গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছে তারা সবাই ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছে।
নিঃসন্দেহে ড. ইউনূস বাংলাদেশের একজন কৃতি মানুষ, বাংলাদেশের জন্য যিনি সুনাম বয়ে নিয়ে এসেছেন। প্রত্যেকেই তাকে শ্রদ্ধা করে। যে গণতন্ত্রের জন্য এত লড়াই এত সংগ্রাম- অনেক মা তার সন্তানহারা, অনেক স্ত্রী তার স্বামীহারা এটা তো শুধুমাত্র গণতন্ত্রের জন্য কথা বলার জন্য এবং নাগরিক স্বাধীনতার জন্য। তাই যদি হয় তাহলে নির্বাচন নিয়ে আপনাদের এত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কেন? নির্বাচনের জন্য আপনারা যে তারিখ দেবেন সেটা বলে দিন, এর মধ্যে যতটুকু সংস্কার করা দরকার করুন।’
গত ১৭ বছরের নানা নির্যাতনের কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘অনেক লড়াই করতে হয়েছে আমাদের।
দিনের পর দিন দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পুরনো জরাজীর্ণ কারাগারে রাখা হয়েছে। ৬০ লাখ বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে, প্রায় দুই লাখ মামলা। এই অবস্থার মধ্যে শেখ হাসিনা মনে করেছিলেন তার বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ নেই, তিনি বাংলাদেশের মানুষের টাকা, বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে নিজের লোকদের দিয়ে লুটপাট করাবেন কেউ কোনো আওয়াজ করতে পারবে না। সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে জনগণের গচ্ছিত টাকা তিনি হরি লুট করবেন, পাচার করবেন, কানাডায় বেগমপাড়া বানাবেন, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানাবেন কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারবে না- এই ছিল শেখ হাসিনার ইচ্ছা। এভাবেই গত ১৫ বছর শেখ হাসিনা দেশ চালিয়েছেন। বিচার বিভাগ তার আঁচলের মধ্যে ছিল, পুলিশ বিভাগ তার শাড়ির আঁচলের মধ্যে ছিল, জনপ্রশাসন তার শাড়ির আঁচলের মধ্যে বাঁধা ছিল।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, ডা. জাহিদুল কবির প্রমুখ।