বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক্যাম্পাসে নির্যাতিত ছাত্রীদের জবানবন্দি ও বৈষম্যহীন শিক্ষাঙ্গন গড়ার দায়' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে ‘শিক্ষা অধিকার সংসদ' এর আয়োজনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় নিজেদের নিপীড়নের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা ও কাজি ফারজানা মিম, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী জয়মা মুনমুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই বিপ্লবের সংগ্রামী সিনথিয়া মেহরিন সকাল এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন।
এসময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন বলেন, ছাত্রলীগের নেত্রী আমাকে এতটাই নির্যাতন করছিল যে, আমার কাছ থেকে সুইসাইড নোট লিখে নিয়ে বলে, এবার তোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখব। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন যদি রাজনৈতিক দলের হাতে জিম্মি না থাকে, তাহলে সব শিক্ষার্থীদের জন্যই নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরি হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ১ বছর জেল খাটেন। কিডনি রোগ থাকা সত্ত্বেও ঢাকার একটি আদালত বারবার খাদিজার জামিন আবেদন নাকচ করে আসছিলেন। অবশেষে কীভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলা থেকেই অব্যাহতি পেলেন সে গল্প তুলে ধরে তিনি বলেন- ‘বিনা দোষে জেল খাটার পরও আমার পক্ষে বিভাগের থেকে কেউ দাঁড়াতে পারেনি। কিছু কিছু শিক্ষকের থেকে যে আচরণ পেয়েছি, তাতে সবচেয়ে বেদনাহত হয়েছি। ভাইভা বোর্ডে যেভাবে প্রশ্ন করে হেনস্তা করা হয়েছে, সেটি আমাকে সবচেয়ে বেশি ব্যথিত করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ৯ দফার ঘোষক আব্দুল কাদের বলেন, আমাদের নারী সহযোদ্ধারা যেভাবে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল তা আমাদের বিজয় অর্জিত হওয়ার পথকে সুগম করেছে। তারা সব বাধা ডিঙিয়ে সামনে এসেছিল। এর ফলেই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে।
সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষা অধিকার সংসদের আহ্বায়ক ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল ফেলো বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক শিক্ষা-গবেষক অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, শিক্ষা ভেঙ্গে পড়লেও তরুণরা ভেঙ্গে পড়েনি। সেটাই আমাদের আশার পথ। আজকের আলাপ শিক্ষা অধিকার সংসদের ১৪ দফার একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। ভবিষ্যতে অন্য সংখ্যাগুলো নিয়ে কাজ করব। আমরা শিক্ষার সব অন্তর্ভুক্তিমূলক ও তরুণদের অংশগ্রহণে কাজ করি।
এছাড়াও, বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস গড়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রাজ্জাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মনিনুর রশিদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদী।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, সংগঠনটির সদস্য সচিব এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।
ডেইলি-বাংলাদেশ
Tags
শিক্ষাঙ্গন