হাসিনা এবং মোদিকে খুশি করতে গিয়ে আমিসহ অন্যান্য আলেমদেরকে রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট করে বললে, আমি তেজগাঁও থানা পুলিশের রিমান্ডে থাকাকালীন সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন ও তার লোকজন দিয়ে আমার জুব্বা-লুঙ্গি খুলে মেয়েদেরকে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরিয়েছিলেন।’
বুধবার দুপুরে সিএমএম কোর্টের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এভাবেই রিমান্ডে থাকা সময়ের লোমহর্ষক বর্ণনা দিচ্ছিলেন আলোচিত ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানী। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে হওয়া চারটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা থেকে আজ খালাস পেয়েছেন তিনি।
রফিকুল ইসলাম মাদানী বলেন, ‘স্বৈরাচারি শেখ হাসিনা সরকারের সময় আলেমদের কাউকে রিসোর্টের মামলা, কাউকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, আবার কাউকে ভাঙচুরের মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হতো। যেসব মামলার কোনো তথ্য প্রমাণ নাই। আসলে বাস্তবতা ছিল, কেন আমরা মোদিবিরোধী কথা বলতাম, কেন মোদিবিরোধী আন্দোলন করতাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে যে বক্তব্যের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেটি দিয়েছিলাম ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু আমাকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে। এর থেকে বোঝা যায়, আমরা কেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে গেলাম, সেটাই ছিল তাদের রাগ এবং ক্ষোভের জায়গা। সেই আক্রোশ থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাদানী বলেন, ‘আমি সবসময় হক কথা, সত্য কথা বলেছি। যে সরকারই আসুক না কেন, আমি সত্য বলে যাবো।’
এদিন মাদানীর বিরুদ্ধে বিচারাধীন রাজধানীর মতিঝিল, তেজগাঁও, পল্টন ও গাজীপুরের গাছা থানার চার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক নূরে আলম তাকে খালাসের আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রফিকুল ইসলাম ও শিশুবক্তার আইনজীবী শোহেল মো. ফজলে রাব্বী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফজলে রাব্বী বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় মাদানীর বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়েছিল। মামলাগুলো প্রমাণিত না হওয়ায় আজ আদালত তাকে সবগুলো মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন।’
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে ১৭ জানুয়ারি গাজীপুরের বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় শিশুবক্তা নামে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ১ মার্চ ওই মামলার বিচারকাজ শুরুর তারিখ নির্ধারণ করেন। ওই সময় ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত অভিযোগ পড়ে শোনালে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। বাসন থানার উপপরিদর্শক এবং এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিলেন। ওই বছরের ১১ এপ্রিল টেকনাগপাড়ার বাসিন্দা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী প্রপাগান্ডা ছড়ানো, হুমকি দেয়া ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা, অপমানকর তথ্য প্রকাশ ও সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়।
র্যা ব সদস্যরা ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল নেত্রকোণা থেকে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আটক করে। একই আদালত রফিকুলের বিরুদ্ধে মতিঝিল, তেজগাঁও ও গাজীপুরের গাছা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।
অবশেষে চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মতিঝিল, তেজগাঁও ও গাজীপুরের গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার খালাস পেলেন ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানী।
Tags
রাজনীতি