বিএমডব্লিউ নামের কোম্পানি চেনেন না, এমন মানুষ এ দেশে খুঁজে পাওয়া একটু কঠিনই। সাধারণত বিএমডব্লিউ গাড়ি বানায়, সেই গাড়ি অনেক দামীও। ফলে সবাই এই গাড়ি কিনতে পারে না। তবে গাড়ি না কিনলেও বিএমডব্লিউ ছাতা এ দেশের অনেক মানুষই ব্যবহার করে। একটু বৃষ্টি হলেই দেখবেন রাস্তায় ভিড় করে আছে শত শত বিএমডব্লিউ! আর চাবির রিং বা পানির বোতল কিংবা লোগোর যথেচ্ছ ব্যবহার হিসাবে নিলে, সেটি হয়তো লাখের ঘর ছাড়াতে পারে।
এমন একটি বিএমডব্লিউপ্রেমী দেশেই ঘটে যেতে পারে এক যুগান্তকারী ঘটনা। কানে–মুখে শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশে আসতে চান বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিএমডব্লিউ–এর মালিক! একেবারেই অবিশ্বাসযোগ্য ও পুরোপুরি বানোয়াট একটি সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। তারা বলছে, বাংলাদেশের মানুষের করা বিশেষ কিছু কাজে একেবারেই হতবাক হয়ে পড়েছেন বিএমডব্লিউ কোম্পানির বেশির ভাগ শেয়ারধারী দুই মালিক স্টেফান কোয়ান্ট ও সুসানে ক্লাটেন। এঁরা দুজন সম্পর্কে ভাই–বোন। এঁরা দুজন মিলেই বিএমডব্লিউ কোম্পানির প্রায় ৪৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক। তাই এক অর্থে এই দুজনকে বিএমডব্লিউ কোম্পানির উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক বলাই যায়। কারণ কোম্পানিটি তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা।
সে যাক গে। ওঁদের গুষ্ঠির কথা এত শুনে লাভ নেই। বরং কেন এই ভাই–বোন বাকহারা হয়ে পড়েছেন, সেটি জানা যাক। আগেই বলা হয়েছে যে, পুরোপুরি বানোয়াট একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বিশ্বাস করা, না করা একান্তই আপনাদের ব্যাপার। আমরা তো চিলে কান নিয়ে গেছে শুনলেই, তার পেছনে দৌড়ানো জাতি। সুতরাং, সূত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে মাথা ঘামানো আমাদের ডিএনএ’তে খুব একটা নেই। এর চেয়ে বরং খবরটা জানা যাক।
শোনা গেছে, সম্প্রতি একটি বিষয় সর্বপ্রথম স্টেফানের নজরে আসে ফেসবুক মারফত। তা তিনি দেখছিলেন ব্রেকফাস্ট করতে করতে। দেখেই আর টোস্টের জেলি তিনি মুখে রাখতে পারেননি। জেলি ফেলে দিয়েই দৌড়ে চলে যান সুসানের কাছে। তাঁকে দেখান ওই ফেসবুক মারফত পাওয়া জিনিস। তা এমনই জিনিস যে সুসানের অনেকটাই জ্ঞান হারায় হারায় অবস্থা! শেষে ভাই–বোনে ধাতস্থ হয়ে ঠান্ডা মাথায় পুরো বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করতে থাকেন। খোঁজ লাগান চারপাশে। এরপর যেসব তথ্য আসতে শুরু করে, তাতে ভাই–বোনের চোখ কপাল ছাড়িয়ে ব্রহ্মতালুতে উঠে যায়। সেখান থেকে চোখকে আবার স্বস্থানে ফিরিয়ে আনতে ডাকতে হয় ডাক্তার। চোখ ঠিক জায়গায় ফিরে আসার আগ পর্যন্ত দুই ভাই–বোন একটি কথাও বলেননি, স্রেফ চুপ করে ছিলেন।
জানা গেছে, স্টেফান ও সুসানে ফেসবুকে দেখেছিলেন একটি পোস্ট। তার শুরুতে লেখা ছিল, ‘Ten Unknown Facts About #BMW’! লেখার পাশাপাশি পোস্টে একটা গরুর ছবিও ছিল। তবে সেই গরুর কপালে, মানে দুই চোখের মাঝখানে বিএমডব্লিউ’র লোগো ছিল কিনা, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্টেফান ও সুসানের একবারেই ঘনিষ্ঠ নয় এবং তাঁদের ত্রিসীমানায় না থাকা কিছু দূরবর্তী সূত্র জোর দিয়ে বলেছে, বিএমডব্লিউ নিয়ে এত আননোন ফ্যাক্টস পেয়ে দুই মালিকই হতবাক। তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে, বাংলাদেশে এ নিয়ে এত মানুষ জোর প্রচারণা চালাচ্ছে। বিশেষ করে বিএমডব্লিউ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাস, লোগো তৈরির কাহিনী, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, বৈশ্বিক কার্যক্রম, ব্র্যান্ড হিসেবে অভিযাত্রা, এমনকি পৃথিবীতে এই কোম্পানির সাংস্কৃতিক প্রভাব নিয়ে এত সমৃদ্ধ ও তথ্যবহুল লেখা নাকি তাঁরা দেখেননি! আগেই বলা হয়েছে যে, দেখার পর থেকে বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের মুখে কথা ছিল না। এর কিছুক্ষণ পর কথা ফিরলেও, তাঁরা নাকি ক্ষণে ক্ষণে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন! বাংলাদেশে পৈতৃক ব্যবসার এমন প্রচারণায় দুই মালিকই নাকি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। অবশ্য পোস্টে থাকা গরুর ছবি দেখে তাঁদের কি বোধ হয়েছে, সেটি স্পষ্টভাবে জানা সম্ভব হয়নি।
তবে স্টেফান ও সুসানে নাকি শিগগিরই বাংলাদেশে আসতে চান। যাদের সঙ্গে তাঁদের কথাও হয় না, কোনোদিন চোখেও দেখেননি—এমন কয়েকজন ‘ঘনিষ্ঠ’ ব্যক্তিকে নাকি তাঁরা টেলিপ্যাথির মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, শুধু ১০টি নয়, বাংলাদেশে বিএমডব্লিউ–এর সব আননোন ফ্যাক্টস সম্পর্কে বলতে চান নিজ মুখে। এতে করে বিএমডব্লিউ কোম্পানির প্রচারের প্রসার হবে বলেই তাঁরা মনে করছেন। তৈরি হবে আরও আরও আজাইরা ফেসবুক পোস্ট। সেই সঙ্গে তাঁদের জানা না থাকা বিএমডব্লিউ’র ছাতার ফ্যাক্টরি, চাবির রিং বা লোগো তৈরির কারখানাও ঘুরে দেখতে চান স্টেফান ও সুসানে! তাঁরা মনে করেন, এর মাধ্যমে বিএমডব্লিউ–এর ব্যবসার প্রভূত প্রসার হতেও পারে।
অবশ্য বিএমডব্লিউ কোম্পানির মালিকদ্বয়ের এমন অভিপ্রায়ের বিষয়টি অবশ্য নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এখন এটি বিশ্বাস করা বা না করা একান্তই পাঠকদের ব্যাপার। তবে ফেসবুক বা ইউটিউবে ঘুরতে থাকা এতকিছু যখন বিশ্বাস করাই হচ্ছে, তখন এতে আর দোষ কোথায়!
একবার বিশ্বাস করেই দেখুন তবে। মনে রাখবেন, কবি বলেছেন—‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’। এবং এ দেশে কিন্তু রতনে রতন চেনে…!
Tags
সরস