"

ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে কেমন হবে বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি?


সন্ত্রাসবাদ দমনে সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জড়াবেন না। অন্তত দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে না তো বটেই। সেক্ষেত্রে, আফগানিস্তান, পাকিস্তানের পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশকেও সংকটপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। যা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে।


বিশেষত, স্থিতিশীল রাষ্ট্র না হওয়া অবদি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বাংলাদেশে সীমিত পরিমাণে বিনিয়োগ করবে তা বলাই বাহুল্য। আর এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাবে ভারত, অন্যদিকে এন্টি-চায়না নীতি হিসেবে ভারত ট্রাম্পের জন্য একটি ভালো বিকল্পও।

তবে, বাংলাদেশও উপকৃত হতে পারে এমন রাজনৈতিক সমীকরণে। বাংলাদেশের ওপর থেকে ওয়াশিংটনের নজর কমে আসলে বাংলাদেশ চায়নার সাথে আগের চেয়েও ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে, যা কি না বিগত ১৫ বছরে ভারত-পন্থী সরকারের কারণে সম্ভব হয়নি।


এমন রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের সর্বপ্রথম উচিত হবে অর্থনৈতিক ভিত্তিগুলোকে আপাতত স্থিতিশীল করা ও পরবর্তীতে আরো মজবুত করা। যেমন জুলাই অভ্যুত্থানের পর বেশকিছু গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে, অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে সম্পূর্ণ গার্মেন্টস সেক্টরেই। সেক্ষেত্রে সর্বপ্রথম স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে, ধীরে ধীরে দেশের অর্থনীতি মজবুত করতে হবে। শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও অটোমেশন সিস্টেম তৈরি করে আরএমজি সেক্টরে আরো উন্নতি করা সম্ভব। গার্মেন্টস সেক্টর ছাড়াও, ফার্মাসিউটিক্যালস, শিপ ব্রেকিং, কৃষিজ পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে।


বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর সবচেয়ে নাজুক সময় পার করছে, যেখানে প্রশাসন থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, প্রতিরক্ষা বাহিনী এমনকি মসজিদের ইমাম পর্যন্ত পালিয়ে গেছে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও পরিবর্তন করা। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শুধু তিন বাহিনীতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং গোয়েন্দা সংস্থা, সীমান্ত সুরক্ষা, উপকূলীয় জলসীমা নিয়ন্ত্রণ করা, মাদক, সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ সহ দেশের যে কোন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি নির্মূল করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। একই সাথে বহুপাক্ষিক কূটনীতি, বিভিন্ন দেশের সাথে যৌথ সামরিক ও নৌ-মহড়া ও বঙ্গোপসাগরে নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।


ট্রাম্প প্রশাসনের কড়াকড়িতে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ছায়ায় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। বিশেষত চীন-ভারতের দ্বন্দ্ব ও চীনের প্রক্সি রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান, আফগানিস্তানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ওপর ওয়াশিংটনের নজর কিছুটা কমই পড়বে। এতে বাংলাদেশ সরাসরি বেইজিংয়ের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন করতে পারে। এবং, সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে থেকে চীনের মাধ্যমে মায়ানমারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে। কেননা ট্রাম্পের অর্থনীতিকেন্দ্রিক রাজনীতির ফলে, পাওয়ার ভ্যাকুয়াম সৃষ্টি হবে এ অঞ্চলে।


ঢাকা-বেইজিং শক্তিশালী সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্য বেশকিছু কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে মায়ানমারকে স্থিতিশীল করা, আরাকানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু সবকিছুই বাংলাদেশের জন্য তুলনামূলকভাবে সহজ হবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন হওয়ায় রোহিঙ্গা ইস্যু ও মায়ানমারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার মত পদক্ষেপ নিতে সরকারের অভ্যন্তরীণ চাপ মোকাবেলা করা সহজ হবে।


মুহাম্মদ ইরফান সাদিক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال