বিগত বছরগুলোয় নানা অভিযোগ আমলে নিয়ে স্বচ্ছ ও বিতর্কমুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের ওপর জোর দিয়েছে নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন কমিশনের সামনে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে এমন মনোভাবের কথা জানায় এ এম এম নাসির উদ্দীন কমিশন। তবে এ বছর কোন পদ্ধতিতে ভোটার তালিকা প্রণয়ন হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কমিশন বৈঠকেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী গতকাল বুধবার বিকেলে কমিশনের সামনে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত নানা তথ্য তুলে ধরা হয়। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিম এসব তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনসহ অন্য কমিশনার এবং ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, অনুষ্ঠানে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত নানা আইনকানুন ও বিধিবিধান কমিশনের সামনে উপস্থাপন করেন ইসি সচিব। ভোটার তালিকা কীভাবে করা হয়, আইন কী বলে, সর্বশেষ তালিকা কীভাবে কোন পদ্ধতিতে করা হয়েছিল এবং সর্বশেষ ভোটার সংখ্যা কত, সে পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। আইন অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসের ২ তারিখের মধ্যে খসড়া এবং ২ মার্চের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের বাধ্যবাধকতার কথা তুলে ধরেন সচিব। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের ক্ষেত্রে এক বছরের তথ্য নিলে কী করতে হবে, আর দুই বা তিন বছরের তথ্য নিলে কী করতে হবে এবং এতে সম্ভাব্য ব্যয় কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে কমিশনকে অবহিত করেন সচিব। এ সময় সচিব জানান, এক বছরের ক্ষেত্রে প্রায় ১২৫ কোটি, দুই বছরের ক্ষেত্রে ১৬০ কোটি এবং তিন বছরের ক্ষেত্রে ১৯৫ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। অনুষ্ঠানে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য কমিশনের জনবল ও কারিগরি প্রস্তুতি কেমন লাগে, সেটিও কমিশনকে অবহিত করেন সচিব। এ সময় কমিশন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নে কী কী সাপোর্ট লাগবে, সেটি আরও স্পষ্ট করার তাগিদ দেন।
বর্তমানে ভোটার তালিকা হালনাগাদের যে আইন আছে, সে অনুযায়ী প্রতি বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদের খসড়া প্রস্তুত করে জানুয়ারির ২ তারিখে প্রকাশ করতে হয়। এই খসড়া তালিকা প্রকাশ করার পর কেউ যদি মনে করেন তিনি খসড়া তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হননি, তখন তিনি আবেদন করতে পারবেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যদি ভোটার হওয়ার যোগ্য হন, তখন তাকে ভোটার হিসেবে গণ্য করা হয়। এই কাজ শেষ করতে হয় মার্চের দুই তারিখ বা তার আগেই।
সূত্র আরও জানায়, বিগত সময়ে ভোটার তালিকা নিয়ে নানা বিতর্ক উঠেছিল, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভোটার তালিকার শুদ্ধতা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয় নতুন কমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ভোটার তালিকা প্রণয়নে আমাদের কী কী প্রস্তুতি প্রয়োজন, সে সম্পর্কে আমরা কমিশনকে অবহিত করেছি। কমিশন যেভাবে চাইবে সেভাবে আমাদের প্রস্তুতি ও কাজ শেষ করতে হবে।
বিগত সময়ে বিতর্কিত ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিশন শুরু থেকে বলছে, সবাই যাতে অবাধে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তার প্রথম ধাপ হচ্ছে ভোটার তালিকার শুদ্ধতা। তাই এটা স্বাভাবিক যে, এবার শুদ্ধভাবেই ভোটার তালিকা করা হবে।
Tags
জাতীয়