"

বারবার মেয়াদ বাড়ে উন্নয়ন শেষ হয় না


আবাসন সংকট নিরসনসহ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে ২০১৯ সালে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে তো শেষ হয়নি; বরং আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ হয়েছে অর্ধেকের কিছুটা বেশি। বর্ধিত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় আবারও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে দুই দফায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে দ্বিগুণ।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামো নির্মাণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন (তৃতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। চার বছর মেয়াদি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪৯৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা; কিন্তু প্রকল্প অনুমোদেনর পর রেট শিডিউল পরিবর্তন হওয়ায় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৫৩৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।


২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সেই সময়ের মধ্যে তেমন কোনো কাজই করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা। নির্ধারিত সেই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ হয়েছিল মাত্র ২৮ শতাংশ। করোনা পরিস্থিতি, উপাচার্য পরিবর্তন, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে কাজ বন্ধ থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এতে চার বছরের প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়ায় ৬ বছরে।


সেই হিসাবে প্রকল্পের মেয়াদ আছে আর মাত্র এক মাস। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ করা অসম্ভব। বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেও কাজ শেষ করতে না পারায় আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করতে চায় কর্তৃপক্ষ। এজন্য মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই হিসাবে চার বছরের প্রকল্প গিয়ে ঠেকছে আট বছরে।


মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পরিবর্তন, করোনা মহামারি এবং জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ৩২টি অঙ্গের মধ্যে ১৩টি অঙ্গের কাজ শেষ হয়েছে। চারটি অঙ্গের কাজ হস্তান্তরের পর্যায়ে এবং অবশিষ্ট ১৫টি অঙ্গের কাজ চলমান রয়েছে।


বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের অধীনে ৯টি ১০তলা ভবন নির্মাণ, ১১টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণসহ মোট ২০টি আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন নির্মাণ ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ শেষ হলেও ৯টি ১০তলা আবাসিক, অনাবাসিক ও একাডেমিক ভবনের কাজ চলমান রয়েছে।


মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিষয়ে বর্তমান প্রকল্প পরিচালক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. মো. নওয়াব আলী কালবেলাকে বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের পর থেকে করোনা শুরু হওয়ায় কাজ করা যায়নি। এ ছাড়া জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে ১০তলা ভবনের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারদের কাজ করতে গড়িমসি শুরু করে। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চুক্তির পরও তারা কাজ করতে চাচ্ছিল না। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে নানাভাবে আলাপ-আলোচনার পর ঠিকাদাররা কাজ করতে রাজি হয়েছে।


তিনি বলেন, প্রথম দিকে কাজের গতি না থাকলেও এখন কাজ চলমান রয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী মেয়াদ বাড়লে বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। মেয়াদ বাড়লে ব্যয় বাড়বে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না। চুক্তি অনুযায়ী কাজ করা হবে। ব্যয় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অনুমোদিত ব্যয়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা হবে।
Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال