বিনিয়োগও রয়েছে শেয়ারবাজারে। কালবেলার হাতে আসা অন্তত ৫০টি বিও হিসাবের তথ্য বলছে, এসব হিসাব এবাদুল করিমের কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার এবং স্বজনরা খুলেছেন। এর মধ্যে অনেকে এবাদুল করিমের পরিবারের সদস্য। শ্বশুরবাড়ির সদস্যরাও রয়েছেন। এ ছাড়া এবাদুল করিমের অফিসে যারা পিয়ন এবং নানা ছোটখাটো কাজে যুক্ত রয়েছেন, তাদের নামেও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ-সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত এবং নথি পেয়েছে কালবেলা।
বীকনের শেয়ার কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি)। সম্প্রতি বীকন ফার্মার শেয়ারদর প্রভাবিত করার মাধ্যমে বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ আজাদ হোসের পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে সিকিউরিটি আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এ কারণে তাকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তথ্য বলছে, আজাদ হোসেন পাটোয়ারী বীকনের এমডি এবাদুল করিমের পিয়ন হিসেবে কাজ করেন। আজাদ পাটোয়ারী ২০২০ সালে প্রায় ১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন শেয়ারবাজারে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য রয়েছে। এবাদুল করিমের আত্মীয় আকতার হোসাইন এমটিবি সিকিউরিটিজ কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে অন্তত ১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। অন্য এক নিকটাত্মীয় সোহেল আলম একই সিকিউরিটিজ কোম্পানির মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন।
জানতে চাইলে বীকন ফার্মার সিএফও মো. জালালউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘আপনি হংকংয়ে যে কোম্পানির কথা বলছেন সেটার নাম আমি শুনি নাই। দুবাইয়ের বীকন গ্লোবাল অপারেশনসেরও নাম শুনি নাই। সব মিথ্যা (অল দিস আর ফলস)।’
বীকন ফার্মার চেয়ারম্যান নুরুন নাহার করিম কালবেলাকে বলেন, ‘বীকন গ্লোবাল আর মেডিকেয়ার একই। বিপুল পরিমাণে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা পুরাই একটা ভুয়া কথা। আমাদের ঋণ করতে করতে শেষ হয়ে গেল। আমরা অসুস্থ হয়ে গেলাম।’
এইচএসবিসি, হংকং এবং মাশরেক ব্যাংক, দুবাইয়ে লেনদেনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি কিছুক্ষণ লাইনে থাকার অনুরোধ করেন। এর কিছুক্ষণ পরে বলেন, ‘আমার সাহেব (এমডি মোহাম্মদ এবাদুল করিম) তো এখন বাসায় নাই। বাসায় আসলে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেব।’
এই প্রতিবেদক বলেন, তাহলে আমি প্রশ্নগুলো করে রাখি, আপনি পরে উত্তর দিয়েন। এরপর প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘লাইনে থাকেন। আমার সাহেবের সঙ্গে কথা বলেন।’ পরে ফোন ধরিয়ে দেওয়া হয় মোহাম্মদ এবাদুল করিমের কাছে। তিনি সব প্রশ্ন শুনে কালবেলাকে বলেন, ‘আরে শোনেন, উল্টাপাল্টা কথা বলতেছেন। কোত্থেকে কী শুনছেন! দুবাইয়ের অ্যাকাউন্টে এক পয়সাও লেনদেন নাই। আর হংকংয়ের অ্যাকাউন্টে লেনদেন হইছে। এই অ্যাকাউন্টটা করাই হইছে আমাদের এক্সপোর্টের বিজনেসটাকে… এভাবে তো ফোনে বলতে পারব না। আপনাদের সন্দেহ থাকলে আপনারা বাংলাদেশ ব্যাংকে কমপ্লেইন করতে পারেন। উনারা ইন্সপেকশন করতে পারে।’ শেয়ারবাজারে কারসাজি ও লোন নিয়ে স্থানান্তরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক না, তথ্যগুলো সঠিক না।’
Tags
জাতীয়