"

চট্টগ্রামে রেজাউলের রহস্যময় বাড়ি

বহুতল ভবনটির মালিকানার কোনো কাগজপত্র নেই। নেই ভবন নির্মাণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনুমোদন। অথচ ছয়তলার ভবনটি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে নগরের বুক চিরে। সেখান থেকে নিয়মিত ভাড়া তুলে আসছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরীর পরিবার। প্রায় ১৮ বছর ধরে পরিবারটি এভাবেই নগরের প্রাণকেন্দ্রখ্যাত চকবাজারের চট্টেশ্বরী রোডের হামদর্দ বিল্ডিং নামে পরিচিত ‘হারুনুর রশীদ চৌধুরী ভিলা’ দখলে রেখেছে। তবে ভবনের মালিক কে জানে না কেউ।


স্থানীয়দের কাছে রহস্যময় বলে পরিচিত ছয়তলা ভবনে বাস করছে ১২ থেকে ১৫টি পরিবার, আছে অনেক দোকানপাটও। অনেকের প্রশ্ন, অবৈধ ভবনটি আসলে কার? এ ব্যাপারে সিডিএ নির্লিপ্ত কেন?


অভিযোগ আছে, ২০০৮ সালের পর থেকে ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভবনটি পারিবারিক দাবি করে এতদিন ভাড়া আদায় করে আসছেন তিনি। ভবনটি সাবেক মেয়রের পারিবারিক সম্পত্তি দাবি করা হলেও সিডিএর কাছে মালিকানার কাগজপত্র এবং ভবন নির্মাণের অনুমোদনের কাগজ দেখাতে পারেনি তারা। রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছেন সিডিএর দায়িত্বশীলরাও।


সরেজমিন জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ভবনটি দখলে রেখেছে সাবেক মেয়রের পরিবার। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকে রেজাউল করিম চৌধুরী পলাতক। তার বহদ্দারহাটের বাড়িতে দফায় দফায় ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। তাই এখন ছয়তলা ভবনটি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ও সিডিএর মধ্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা। তবে বর্তমানে ভবনের কয়েকজন মালিক থাকার কথা বললেও ভাড়া তুলছেন সাবেক মেয়রের ভাই নজরুল করিম চৌধুরী। কখনো তিনি নিজে ভাড়া তোলেন, কখনো অন্য কারও মাধ্যমে নিয়মিত ভাড়া আদায় করেন বলে জানান ভবনের নিরাপত্তাকর্মী।


ভবনের দারোয়ান আলমগীর বলেন, আগে ভাড়ার টাকা রেজাউল করিম চৌধুরীর লোক এসে নিয়ে যেতেন। সরকার পতনের পর তিনি পলাতক। বর্তমানে ভাড়ার টাকা সাবেক মেয়রের ভাই নজরুল করিম চৌধুরী ও সুমন নামে একজন নিয়ে যান।


ভবনের কয়েক ভাড়াটিয়া ও স্থানীয়রা বলেন, ১৮ বছর ধরে এটি রেজাউল করিম চৌধুরীর পরিবারের ভবন হিসেবে দেখে আসছি। সাবেক মেয়রের ভাই ও প্রতিনিধিরা এসে নিয়মিত ভাড়া নিয়ে যান। ১৮ বছরের আগে কী ছিল জানা নেই। ভবনের অনুমোদন আছে কি না, সেটাই আমাদের জানা নেই।


চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার প্রকৌশলী তানজির বলেন, ওই ভবনের বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। এরপর আমাদের লোক পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এক সপ্তাহ পার হলেও ভবনের বা অনুমোদনের কোনো কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি কেউ।


সিডিএর কাছে ভবন অনুমোদনের কাগজ আছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভবনটি অনেক পুরোনো। এর অনুমোদন ছিল কি না, সেটাও নিশ্চিত নয়। তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।


সিডিএ মাঠ কর্মকর্তা বিধান বড়ুয়া বলেন, এক সপ্তাহ আগে চকবাজারের হারুনুর রশীদ ভিলায় সরেজমিন গিয়েছিলাম। সেখানে কেউই কোনো ধরনের কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তবে মালিকপক্ষ কাগজগুলো পুড়ে যাওয়ার কথা বললেও ভবনের মালিকানা, সিডিএ প্ল্যানের কোনো কপি দিতে পারেনি।


সাবেক মেয়রের ভাই নজরুল করিম চৌধুরী বলেন, ১৯৫৬ সালে বাবা জায়গাটা কিনে সন্তানদের নামে আমমোক্তারনামা করেন। এটি আমাদের পারিবারিক ভবন। তবে ২০০৭-০৮ সালের দিকে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। বর্তমানে ভবনটি কয়েকজন কিনে নিয়ে তারাই ভাড়া আদায় করেন।


তবে কোন কোম্পানি বা বর্তমানে কয়জনের মালিকানায় ভবনটি আছে, বা কারা কারা ভবনটি কিনেছেন সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।


চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সদস্য জাহিদুল করিম কচি কালবেলাকে বলেন, ভবনের মালিক যেই হোক, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে ভবন নির্মাণে অনুমোদন নিতে হবে। এটি আগামী বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি তুলব। নিয়মতান্ত্রিকভাবে এর তদন্তও হওয়া উচিত।
Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال