"

চট্টগ্রাম বন্দরে ১৪ মাসেও বসেনি চার স্ক্যানার


চীন থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চারটি কনটেইনার স্ক্যানার আমদানি করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বাড়ানো ও মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য খালাস রোধ করতে এসব স্ক্যানার আনা হয়। স্ক্যানারগুলো অপারেশনের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছিল ১০ বছর। কিন্তু এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ১৪ মাস। অথচ এখনো একটিও স্ক্যানার বসেনি চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে একটি স্ক্যানার বসানোর প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও বাকি সব স্ক্যানার কবে বসবে, তা অনিশ্চিত। তবে এসব স্ক্যানার দ্রুত বসানোর উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি এক বছরেও এসব স্ক্যানার বসাতে না পারায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উদাসীনতাকেই দুষছেন তারা।


চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির ঘটনা বেড়েছে। যে কারণে এমন ঘটনা রোধে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বন্দরে স্ক্যানার বসানোর কথা ছিল। চট্টগ্রাম কাস্টমসের উদ্যোগে চীন থেকে চারটি স্ক্যানার আমদানিও করা হয়েছিল। শুরুতে ছয়টি স্ক্যানার বসানোর জন্য এই প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৪৭ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তবে এ ছয়টি কনটেইনার স্ক্যানার স্থাপনের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ প্রথমবার দরপত্র আহ্বানের পর সে বছরের ২৪ জুন, ১৫ জুলাই, ৩ আগস্ট ও ২৫ আগস্ট আরও চারবার পিছিয়ে দরপত্র প্রকাশ করা হয়। ২৫ আগস্ট দরপত্র আহ্বান শেষে মূল্যায়ন কমিটির কাছে তিনটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র পাঠানো হলেও ২০২২ সালের ২৬ মে পুনরায় একই দরপত্র আহ্বান করা হয়। যার দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ করে একনেকের অনুমোদন নিয়ে চীনা প্রতিষ্ঠান নাকটেক কোম্পানি লিমিটেডকে কাজ দেওয়া হয়। পরে গত বছরের ৪ জানুয়ারি চীনের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি হয়। তারা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে চারটি স্ক্যানার আনে। চুক্তি অনুযায়ী স্ক্যানারগুলো স্থাপনের পরবর্তী পাঁচ বছর সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করার কথা রয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠানটির।


জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে ১২টি গেটে ৯টি স্ক্যানার রয়েছে। এর মধ্যে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ১ নম্বর গেট, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ৩ নম্বর গেট, সিপিএআর গেট ও ৪ নম্বর গেটে রয়েছে এফএস ৬০০০ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ২, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে আছে একটি করে এফএস ৩০০০ মডেলের ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। এ ছাড়া সিসিটি-২ ও জিসিবি-২ নম্বর গেটে রয়েছে একটি করে মোবাইল স্ক্যানার। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার উপকমিশনার ইমাম গাজ্জালী বলেন, স্ক্যানারগুলো প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে ছিল। এর একটি বড় কারণ হলো, স্ক্যানারগুলো বসানো হবে চট্টগ্রাম বন্দরে, তাই বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা স্বাপেক্ষে এ স্ক্যানারগুলো বসানোর স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। স্ক্যানারগুলো আরও আগে বসানো যেত। তবে বিভিন্ন জটিলতা ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে স্ক্যানারগুলো বসাতে একটু বেশি সময় লেগেছে। এখন যেহেতু স্ক্যানার বসানোর জায়গা নির্ধারণ হয়ে গেছে, আর বেশি সময় লাগবে না।


চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক কালবেলাকে বলেন, কাস্টমস যেসব স্ক্যানার বসাতে চেয়েছে, আমরা তাদের জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছি। তবুও কেন বসানো হয়নি, এই বিষয়টি আমার জানা নেই।


এদিকে একটি স্ক্যানারের কাজ শিগগির শেষ হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার ইমাম গাজ্জালী। তিনি বলেন, এখন যেটি বসানোর কাজ শুরু হয়েছে, সেটি এনসিটি ২ নম্বর গেটের। এটার কাজ প্রায় শেষ। আশা করা হচ্ছে, শিগগির কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর পর্যায়ক্রমে এনসিটি ৪ ও ৫ এবং সিসিটি ২ নম্বর গেটে বাকি তিনটি বসানো হবে। এনসিটি-৫ নম্বর গেটে একটি স্ক্যানার আছে। তবে সেটা পুরোনো, প্রায় সময়ই নষ্ট থাকছে। আর ৪ নম্বরে একটা বন্ধ থাকছে। যেটা অনুরোধ করে করে চালাতে হচ্ছে।


স্ক্যানার ইনস্টল হওয়ার আগেই এক বছর মেয়াদ শেষ হয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের নির্দেশনায় নন-এগ্রেসিভ ইনস্ট্রাকশন গাইডলাইন আছে। সে অনুযায়ী, স্ক্যানারগুলো অপারেশনের আয়ুষ্কাল ধরা হয় ১০ বছর। ওয়ারেন্টি পিরিয়ড যখন থেকে শুরু, তখন থেকে আমরা আয়ুষ্কাল হিসাব করি। এ ছাড়া এখনো অফিসিয়ালি মেশিন তো তারা (নাকটেক কোম্পানি লিমিটেড) বুঝিয়ে দেয়নি। মেশিনগুলো এখনো পার্টস হিসেবে আছে। সিঅ্যান্ডএফের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এসব স্ক্যানার বসাতে যত বেশি দেরি করবে, ততই দেশের লোকসান হবে। সুতরাং দ্রুত এসব স্ক্যানার বসানোর অনুরোধ তাদের।
Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال