"

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অন্যায় প্রশ্রয় দেবে না


রুহুল কবির রিজভী : বিএনপি-জামায়াতের দূরত্ব বা নৈকট্য কোনো বিষয় নয়। জামায়াত ও বিএনপি দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক দল। জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোট হয়েছিল। নির্বাচনের পর সব দল নিজেদের মতো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করে। নিজের মত নিয়ে চলে। জামায়াতের কোনো বক্তব্য/কর্মকাণ্ড প্রতিষ্ঠিত নীতিমালা বা বিএনপির নীতিবিরুদ্ধ হলে আমরা তার কঠোর সমালোচনা করি। তারাও বিএনপির সমালোচনা করে।


কালবেলা : আগামীতে বিএনপির রাজনীতি কেমন হবে?


রুহুল কবির রিজভী : আগামীতে বিএনপির রাজনীতি কেমন হবে, তার কিছুটা স্বরূপ এখনই আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। বিএনপির নামে কেউ দখলদারি, চাঁদাবাজি করলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলেও কোনো অনৈতিক-বেআইনি কাজকে প্রশ্রয় দেবে না। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করা হবে। মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবে। মতপ্রকাশে কোনো বাধা থাকবে না। কেউ গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হবে না, এ বিষয়ে আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি। এটাই হবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন আগামীর বাংলাদেশ।


কালবেলা : সম্প্রতি একটি বক্তব্যে আপনি বলেছেন ‘ঢেঁকি নরকে গেলেও ধান ভানে’। এ বাক্যটি কোন প্রেক্ষাপটে বলেছেন?


রুহুল কবির রিজভী : শেখ হাসিনার বিভিন্ন কল রেকর্ড ভাইরাল হচ্ছে। তিনি আসলে কী মেসেজ পাঠান, তিনিই ভালো জানেন। এসব তার আসল রূপের আরেকটি বর্ধিত অংশ। বাংলাদেশ সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে যে অভিন্ন অংশে আসা যায়, এটা তিনি শেখেননি। শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় নেতিবাচক দিক হলো, আওয়ামী লীগের সমালোচকদের তিনি শত্রু মনে করেন। এসব ভ্রান্তির মাঝে থাকার কারণে তিনি এত রক্ত ঝরিয়েছেন। নিজে পৃথিবীর অন্যতম ফ্যাসিবাদী শাসক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তার যে বৈশিষ্ট্য-হিংসা, প্রতিহিংসা, আক্রোশ, সেটা দেশে থাকতে যেমন ছিল, তেমনি ভারতে বসেও। তার কোনো অনুশোচনা নেই। একটা গান আছে, ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি...’। আসলেই তিনি মনে করছেন, দেশটা তার বাপের। যখন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন, তখন যেমন তার কর্কশ প্রতিশোধের উচ্চারণ আমরা শুনেছি; এখন দেশের বাইরে বসেও তার হুমকি একইরকম। এজন্যই বলেছি, ‘ঢেঁকি নরকে গেলেও ধান ভানে’।


কালবেলা : আপনি বলেছেন ‘উপদেষ্টারা সরকারি চাকরিজীবীর মতো কাজ করছেন’। আপনার কাছে এরকম কেন মনে হলো?


রুহুল কবির রিজভী : চাকরিজীবীরা কোনো নীতি তৈরি করেন না। বরং ঊর্ধ্বতনের আদেশ অনুসরণ করেন। উপদেষ্টারা নীতিমালা তৈরি করবেন, সেটা বাস্তবায়নের গতিশীলতা থাকবে। কিন্তু সেই গতি নেই। সুশীল সমাজ বা চাকরিজীবীর ইমেজ নিয়ে সরকার চালানো বেশ মুশকিল। এজন্য পৃথিবীতে সরকার চালাতে রাজনীতিবিদের প্রয়োজন হয়। অথচ বিপ্লবী সরকার হিসেবে আরও বেশি কর্মতৎপর হওয়ার কথা ছিল। সেই কর্মতৎপরতা উপদেষ্টাদের মধ্যে দেখছি না। একেবার চিফ এক্সিকিউটিভের মতো কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এটা তো ফ্যাশনেবল সরকারের কাজ। বিপ্লবী সরকার কখনো রুটিন ওয়ার্ক করতে পারে না। তাদের দিনরাত একাকার হয়ে যাওয়ার কথা। গণতন্ত্রের জন্য এত বড় বিপ্লবের পর যদি এখনো গণতন্ত্রের যাত্রাই শুরু করতে না পারি, তাহলে এটা বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এজন্যই উপদেষ্টাদের সরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে তুলনা করেছিলাম।


কালবেলা : উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা চলছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?


রুহুল কবির রিজভী : সরকার যে কোনো সময় উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে বা বাদ দিতে পারে। সব বিষয়ে বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়। কিন্তু সরকারকে ভাবতে হবে, তারা বিশেষ পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের সরকার। সরকারের আইনগত বৈধতা যে খুব বেশি আছে এটা বলছি না, কিন্তু এ সরকার বৈধ। জনগণ যাকে সমর্থন করে, সেটাই বৈধ সরকার। সে ক্ষেত্রে জনগণের পছন্দ-অপছন্দের দিকে খেয়াল রাখতে হবে সরকারের। কে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে সমর্থন দিয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এসব জেনেই নিয়োগের ব্যাপারে বিবেচনা করা উচিত। সেটা না করতে পারলে সরকার নিজেই নিজের বিপদ টেনে আনবে। সবসময় ভুলের পরিমাণ বেশি হলে সরকারের খেসারত দিতে হবে।


কালবেলা : দেশবাসীর উদ্দেশে আপনি কী বলতে চান?


রুহুল কবির রিজভী : দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের ফল অন্তর্বর্তী সরকার। শেখ হাসিনার বিদায় ও স্বস্তির নিঃশ্বাস মানুষের প্রত্যাশা ছিল। মানুষ সেটা পেয়েছে। এ প্রত্যাশা যেন আরও বাস্তবভাবে ফুটে উঠতে পারে সেজন্য ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দলসহ সরকারের সব অংশীজনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এবার যেন গণতন্ত্রের যাত্রাপথে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, সেটা যেন আমরা নিশ্চিত করতে পারি। তাহলে গণতন্ত্র কখনোই ধ্বংস হবে না।
Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال