নাম বদলালেও চরিত্র বদলায়নি দুদকের
দুর্নীতি দমন ব্যুরো প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান ছিল। সে সময় সংস্থাটিকে পরিচালনা করা হতো সরকারের ইচ্ছায়। যে কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সরকার-ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ হাতে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি দুর্নীতি দমন ব্যুরো। বরং সরকারের অপছন্দের ব্যক্তিদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমন প্রেক্ষাপটে সুশীল সমাজ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থার চাপে ২০০৪ সালে আইন করে দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নামে একটি স্বাধীন সংস্থা গঠন করা হয়। তবে দুর্নীতি দমনে সংস্থাটির নাম বদলালেও চরিত্র বদলায়নি। প্রতিষ্ঠার ২০ বছরেও দুদকের অবস্থা ‘যেই লাউ সেই কদু’।
যেই ক্ষত নিরসনে ২০০৪ সালে দুদক আইন করা হয়েছে, তা খাতা-কলমেই রয়ে গেছে। নাম পরিবর্তন ছাড়া সংস্থাটিকে শক্তিশালীকরণে আদতে তেমন কাজই হয়নি। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল দুদককে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। আবার সরকার-ঘনিষ্ঠদের বেলায় ছিল ‘ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না কথা’। সর্বাঙ্গে ক্ষত দুদককে শক্তিশালী করতে এখন সংস্থাটির সর্বাঙ্গে অস্ত্রোপচার করে ওষুধ দিতে হবে বলে মনে করছেন দুদকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। দুদকের সংস্কারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে প্রধান করে একটি কমিশন করে দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগামী ৭ জানুয়ারি কমিশন তাদের প্রতিবেদন দিতে পারে বলে জানা গেছে।
দুদকের সংস্কার নিয়ে কালবেলার পক্ষ থেকে সংস্থাটির সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাদের বক্তব্যমতে, সংস্থাটি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। দলীয় রাজনীতি এবং আমলাদের হাতে একপ্রকার জিম্মি হয়ে আছে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে রেখেছেন অন্তত ৪৮ জন প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে রয়েছেন মহাপরিচালক পাঁচজন, পরিচালক ১৬ জন এবং ১৬ জন উপপরিচালকসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তা। প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের অধিকাংশই প্রশাসন ক্যাডারের। ফলে বিগত সময়ে প্রশাসন ক্যাডারদের বিরুদ্ধে আসা বেশিরভাগ অভিযোগই হিমাগারে। কিছু অভিযোগ অনুসন্ধান না করে দুদক আইন ভঙ্গ করে বরং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠানো হয় যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক) থেকে। ২০১৮ সালে দুদকের জন্য অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হলেও সেই অনুপাতে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই জনবল সংকটে ভুগছে সংস্থাটি। দুদক আইনে নিজস্ব প্রসিকিউশন নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও গত ২০ বছরে সেটা হয়নি। ফলে যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে সেই সরকারে আজ্ঞাবহ আইনজীবীদের কমিশনে প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারের আজ্ঞাবহ আইনজীবীরা সরকারের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করেন না। ফলে মামলার রায় অনেক ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণ থাকলেও দুদকের বিপক্ষে যায়।
সংশ্লিষ্টারা আরও বলছেন, দুদকের ফ্রি হটলাইন নম্বরে অভিযোগ এলে আগে তাৎক্ষণিক রেসপন্স করা হতো। এখন সেটা হয় না। দুদকের দুজন কমিশনারের মধ্যে একজন অনুসন্ধান ও অন্যজন তদন্তের দায়িত্বে। ফলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় জোর দিতে পারছে না সংস্থাটি। আবার তিনজনের দুজন কোনো বিষয়ে একমত হলে অন্যজনের মতামত কোনো ভূমিকা রাখে না। ফলে একই সার্ভিস থেকে দুজন হলে তৃতীয়জন কোণঠাসা হয়ে পড়েন। আবার শীর্ষ তিনটি পদেই নিয়োগ দেওয়া হয় সংস্থাটির বাইরে থেকে। ফলে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ কমিশনারের দুদকের কার্যক্রমের বিষয়ে জানতেই বছর লেগে যায়। তারা নিজেদের গুছিয়ে তৎপর হতেই বিদায় ঘণ্টা বেজে যায়।
এমন অবস্থায় দুদকের ভেতর থেকে সৎ, যোগ্য ও সাবেক কর্মকর্তা থেকে কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার দাবি উঠছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে দুদকের গতি বহগুণে বাড়বে। এ ছাড়া দুর্নীতি হওয়ার পর অভিযুক্তদের শাস্তির পরিবর্তে প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ নিয়ে দুর্নীতি হওয়ার পথ রুদ্ধ করতে পারলে তা অধিক কার্যকর হবে।
গণশুনানি দুর্নীতি বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে সেদিকে গুরুত্ব কম কমিশনের। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে ১৩টি, ২০২২ সালে তিনটি ও ২০২১ সালে একটি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুদকের আর্থিক বরাদ্দ সরকার থেকে নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার যা দেয়, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। বিটিআরসি, বিআরটিএ, এনআইডি সার্ভার, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, ইন্স্যুরেন্স ডাটাবেজে কমিশন কর্তৃক প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল নিয়োগ দিয়ে বা পদায়ন করে পৃথক সেল গঠন করা হলে দুদকের গতি আরও বাড়বে বলে মত সংস্থাটির কর্মকর্তাদের। এ ছাড়া এনফোর্সমেন্ট পরিচালনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বিকেন্দ্রীকরণ; এনফোর্সমেন্ট টিমকে প্রয়োজনীয় লোকবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া; আবার দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও কখনো কখনো দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে; তাই নিজেদের দুর্নীতি আটকাতে একটি কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গঠনে মত কর্মকর্তাদের। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারে (এনটিএমসি) দুদকের ডেস্ক ও কর্মকর্তা নিয়োগ করা জরুরি বলেও মনে করছেন দুদকের কর্মকর্তারা।
যাচাই-বাছাই কমিটি শক্তিশালীকরণ: দুদকে অনুসন্ধানের প্রাথমিক স্তর হলো যাচাই-বাছাই কমিটি বা যাবাক। দুদকে আসা প্রতিদিনের অভিযোগ বাছাই করে অনুসন্ধানের জন্য সুপারিশ করে এই কমিটি।
সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে মোট অভিযোগ জমা পড়েছে ১৫ হাজার ৪৩৭টি। এর মধ্যে মাত্র ৮৪৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয় ৯১৩টি অভিযোগ। প্রায় একই হার বিগত ৫ বছরের পরিসংখ্যানেও দেখা যায়।
জানা যায়, তিন সদস্যবিশিষ্ট যাবাকের সভাপতি মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং), সদস্য সচিব দৈনিক ও সাম্প্রতিক সেলের পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল। আরও একজন উপপরিচালক কমিটির সদস্য। ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর থেকে প্রেষণে আসা প্রশাসন ক্যাডারের উত্তম কুমার মণ্ডল যাবাকের সদস্য সচিব পদে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দুদকের অভ্যন্তরেও এক ধরনের ক্ষোভ রয়েছে। যাবাকে বসে প্রশাসনের দুর্নীতির অভিযোগ আটকে রাখার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
জানতে চাইলে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘দুদকে অনেক অভিযোগ এলেও দক্ষ ও যোগ্য লোকের অভাবে যাচাই-বাছাই ঠিকঠাক হয় না। যাবাক থেকে গুরুতর অপরাধ যেমন ব্যাংক জালিয়াতি, বড় বড় ক্রয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি অভিযোগ আমলে নেওয়া হয় না। একেবারে নিচু সারির কর্মচারী যেমন—পিয়ন, কেরানিদের অভিযোগ গ্রহণ করে অনুসন্ধান ও তদন্তকারীদের ব্যস্ত রাখা হয়। অভিযোগ বাছাইকালে সংক্ষিপ্ত পরিদর্শন বা ওপেন সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় না।’ দুদকের এই কর্মকর্তা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় দুর্নীতির কারণে দেশের স্বাস্থ্য খাত বেশ আলোচনায় ছিল। মাস্ক কেলেঙ্কারি, কভিড টেস্ট নিয়ে জালিয়াতি, জনবল নিয়োগে কোটি টাকা ঘুষ প্রস্তাব, যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় শত শত কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনায় উচ্চপদস্থ কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গ্রেপ্তার হয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আবদুল মালেক ও কর্মচারী আবজাল হোসেন।’
দুর্নীতির উৎস বন্ধ না করে ডালপালা ছাঁটে দুদক: দেশে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় উৎস বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প। এ ছাড়া বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিস, পুলিশ স্টেশন, ভূমি অফিসসহ সরকারি অতিগুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দপ্তর। তবে বিগত দিনে সরকারের কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে দুদককে অনুসন্ধান করতে দেখা যায়নি। অতিগুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরগুলোয় অভিযানের সংখ্যাও ছিল সীমিত বা লোক দেখানো। ফাঁদ মামলা হয় না বললেই চলে। অন্যদিকে ব্যক্তির সম্পদ খুঁজতে তৎপর ছিল দুদক। জানতে চাইলে দুদকের একজন পরিচালক কালবেলাকে বলেন, ‘দুর্নীতির উৎসে হানা না দিয়ে ব্যক্তির সম্পদের পেছনে ছুটছে দুদক। কারণ অফিসে বসে বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিলেই সব হাতে চলে আসে। দুদক যখন তখন যে কারও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিচ্ছে, সম্পদ বাজেয়াপ্ত করছে। একজন ব্যবসায়ীর সব টাকাই কিন্তু জ্ঞাত আয়বহির্ভূত নয়। অনেকে উচ্চ ট্যাক্সের কারণে সম্পদ অপ্রদর্শিত রাখেন। এখন আমরা এভাবে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করলে তিনি নিজেকে অনিরাপদ বোধ (ইনসিকিউর ফিল) করবেন, সম্পদ ডলারে কনভার্ট করে বাইরে পাচার করে দেবেন। দেশের অর্থনীতিতেও বিনিয়োগ করবে না।’
দুদকের নোটিশ পাত্তা দেয় না সরকারি দপ্তর: ২০২৩ সালে যাবাক থেকে বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতির ব্যবস্থা নেওয়া কিংবা তদন্ত-পূর্বক প্রতিবেদন দিতে ৯১৩টি পত্র দেয় দুদক। একইভাবে ২০২২ সালে ৩ হাজার ১৫২টি, ২০২১ সালে ২ হাজার ৮৮৯টি, ২০২০ সালে ২ হাজার ৪৬৯টি এবং ২০১৯ সালে ৩ হাজার ৬২৭টি চিঠি দেওয়া হয়েছে দুদক থেকে। দুদকের আইন অনুযায়ী, সংস্থাটির তপশিলভুক্ত অপরাধ অন্য কোনো সংস্থা তদন্ত করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে এই চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া আইনসংগত কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া দুদক সূত্র জানিয়েছে, এসব চিঠির ১০ শতাংশ কোনো কাজে আসে না। সরকারি কোনো দপ্তরই এসবের কোনো জবাব দেয় না। এ বিষয়ে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব চিঠি কোনো কাজে তো আসেই না, বরং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ঊর্ধ্বতনদের চাঁদাবাজির একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়।’ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ধরেন একটি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলো। এখন এটিকে যদি ডিসির কাছে পাঠানো হয়, তখন ডিসি ঠিকাদার ও ইউএনওকে ডেকে বিষয়টি মীমাংসার জন্য তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে।’
স্থায়ী প্রসিকিউশন গঠন হয়নি ২০ বছরেও: দুদক আইনের ৩৩ নম্বর ধারায় নিজস্ব স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন কমিশন কর্তৃক তদন্তকৃত এবং স্পেশাল জজ কর্তৃক বিচারযোগ্য মামলাগুলো পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে কমিশনের অধীন উহার নিজস্ব একটি স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট থাকবে।’ ২০০৪ সালে এই আইন হলেও গত ২০ বছরে স্থায়ী প্রসিকিউশন গঠন করতে পারেনি দুদক। আর যেই সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তখন সেই সরকারের আজ্ঞাবহ আইনজীবীদের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকে।
পদ থাকলেও জনবলের সংকট, নিয়োগে অনীহা: ২০১৮ সালে দুদকের একটি অর্গানোগ্রাম প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ১ হাজার ২৭৪টি বিদ্যমান পদ থাকা অবস্থায় নতুন করে আরও ১ হাজার ৬৮টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার ১৯৬টি পদ বিলুপ্ত করা হয়। বিলুপ্ত পদ বাদ দিয়ে দুদকে বর্তমানে পদের সংখ্যা ২ হাজার ১৪৬টি। তবে দুদকের ২০২৩ সালে বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সংস্থাটিতে মাত্র ১ হাজার ২২৩ জন কর্মরত রয়েছেন। বাকি পদগুলো শূন্য। এর মধ্যে প্রধান কার্যালয়ে ৫৭৭ জন কর্মরত আর ৬১৭টি পদ শূন্য। বিভাগীয় কার্যালয়ে ৮৩টি পদে লোকবল থাকলেও শূন্য রয়েছে ৩৭টি। জেলা কার্যালয়ে ৫৬৩ জন লোকবল থাকলেও শূন্য ২২১টি পদ। এ ছাড়া সংস্থাটির কর্মকর্তাদের জন্য কোনো সাপোর্টিং স্টাফ নেই। ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া পদগুলোর সবই ছিল দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির। ফলে একটা ফটোকপি করার প্রয়োজন হলেও সেটি করতে হয় প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের।
জানতে চাইলে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘দুদকে দক্ষ, যোগ্য ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কমিশন নিয়োগ দিতে হবে। এ ছাড়া দুদকের মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে। রায় হতে হতে অনেক সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচারের বাইরে চলে যান। তাই দুই বছরের মধ্যে মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মামলা নিয়ে যেতে হবে। তাহলেই দুদকে গতি ফিরবে।’
এ বিষয়ে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা দুদকের সংস্কার নিয়ে কাজ করছি। আমাদের প্রস্তাবনার জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দেব।’