"

সংখ্যালঘু সংগঠন ‘ঐক্যমোর্চার’ ৮ দফা বাস্তবায়নে গণসমাবেশ


ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষার ৮ দফা বাস্তবায়ন দাবিতে গণসমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সংখ্যালঘু সংগঠন ‘ঐক্যমোর্চা’।

শনিবার বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীতে জাতীয় শহিদ মিনার চত্বরে এ গণসমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হিন্দুবৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রোজারিও।

এছাড়া বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্রী মনীন্দ্র কুমার নাথ, অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের কেন্দ্রীয় সভাপতি পলাশকান্তি দে, নির্বাহী সভাপতি সুধাংশু চন্দ্র বিশ্বাস, ইসকনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মাচারী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বাসুদেব ঘোষ, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায়সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমাদের ৮ দফা দাবির জন্য আজকে আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। আমরা এই ৮ দফা দাবি নিয়ে অনেক আগে থেকেই আন্দোলন করছি। কিন্তু আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। এর আগে আমরা আন্দোলন করে থমকে গিয়েছি। কিন্তু এবার আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করতেই হবে‌। এর কোনো বিকল্প নেই। এই বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫৩ বছর হয়ে গেলেও সংখ্যালঘুদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকার বলছে এই দেশে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে না। সারা বিশ্ব দেখছে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দখছে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। শুধু সরকার দেখছে না‌। আমাদের ৮ দফা দাবি পূরণ ছাড়া আমাদের ঘরে ফেরানো যাবে না। দাবি না মানলে ঢাকা অভিমুখে ৫০ লাখ লোক ঢাকা অবরোধ করবে। তিন কোটি হিন্দুর বিরুদ্ধে মামলা করার সামর্থ্য আপনাদের নাই। আন্দোলনে গণবিস্ফোরণ হওয়ার আগে আমাদের দাবি মেনে নেন। আমারা দেখেছি জুলাইয়ের ৫ তারিখের পর থেকে অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে, মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের উপদেষ্টা মণ্ডলী এই হামলার কথা শিকারই করে না। ইসকনকে নিষিদ্ধ করার কথা বলেছে। ইসকনকে নিষিদ্ধ করলে সারা বিশ্ব থেকে প্রতিবাদ হবে। নিতান্ত ক্ষোভ, দুঃখ ও উদ্বেগের সাথে বলতে চাই, ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তের কণ্ঠরোধের অপপ্রয়াসে তাকে দু’টি মিথ্যা হত্যা মামলায় জড়িত করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলায়ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর কয়েকজন নেতা মিথ্যা মামলার শিকার। তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক এসব মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

সংখ্যালঘু ঐক্যমৌর্চার ৮ দফা দাবি-

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন।

জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন।

অর্পিতসম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখলভুক্তভোগীদের বরাবরে অনতিবিলম্বে প্রত্যর্পণ।

জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সরকারে, সংসদে, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সকল সংস্থায় অংশীদারিত্ব ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ।

দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন।

বৈষম্যবিলোপ আইন প্রপ্রনয়ণ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের যথাযথভাবে কার্যকরীকরণ।

হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপুজোয় অষ্টমী থেকে দশমী ৩ দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় ১ দিন ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডে’তে ১দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা।

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ পুনর্গঠনে ৬ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে-

১. সব রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও সংসদের প্রতিটি অধিবেশনের সূচনায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে সব ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের পদক্ষেপ গ্রহণ।

২. সংবিধানে বিদ্যমান সাংবিধানিক বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ১২ অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক রাষ্ট্রধর্ম সম্বলিত ২ক অনুচ্ছেদের বিলোপকরণ।

৩. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় শিক্ষায়তনের উন্নয়ন ও বিকাশে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ধর্মীয় শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর বৈষম্য দূরীকরণ।

৪. ধর্মীয় বাজেটে বিরাজিত বৈষম্য দূর করে আমানতের সুদের টাকায় পরিচালিত ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টসমূহকে ফাউন্ডেশনে রূপান্তরকরণ।

৫. সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও কটূক্তির প্রতিকারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ।

৬. পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষাব্যবস্থায় যাবতীয় ধর্মীয় বৈষমের অবসান করে অসাম্প্রদায়িকতাকে অগ্রাধিকার প্রদান।

গণসমাবেশ শেষে একটি মিছিল জাতীয় শহিদ মিনার থেকে বের হয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়।
Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال