"

বিএনপি কর্মীদের চাঁদা দাবির মুখে হাসপাতালে ব্যবসায়ী


যশোরে বিএনপি কর্মীদের চাঁদা দাবির চাপে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন রোকনুজ্জামান ইবাদ নামে এক ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে চাঁদার হুমকি পাবার পরই নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয় তাকে।


ইবাদ মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের আমিনপুর গ্রামের জয়নাল সরদারের ছেলে ও কাঠব্যবসায়ী।


ভুক্তভোগী ইবাদের পরিবার জানায়, শ্যামকুড় ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বুলবুলের অনুসারী মিজান, রিপন মোল্যা ও মশিয়ার মোল্যা কিছুদিন ধরে ইবাদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল তাকে। এমনকি চাঁদা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।


পরে মঙ্গলবার সকালে বিএনপি কর্মী মশিয়ার মোল্যা ব্যবসায়ী ইবাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যে তাদের নেতা বুলবুলের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এতে আরও চাপে ও চিন্তায় পড়ে যান ইবাদ। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।


ব্যবসায়ী ইবাদের পরিবার অভিযোগ করে, চাঁদার দাবি করে যখন হুমকি দেওয়া হচ্ছিল তখন আমরা ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারিনি; বরং টাকা ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছি। কারণ বাড়িতে ইবাদের বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও ছোট ছোট ৩টি সন্তান আছে। ইবাদের বড় মেয়ে একা একা স্কুলে যাতায়াত করে। যদি তারা কোনো ক্ষতি করে, সেই ভয়ে আমরা মুখ খোলার সাহস পাইনি। কিন্তু এখন এলাকায় সবকিছু জানাজানি হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাড়িতে থাকতেও ভয় পাচ্ছি। ইবাদকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এখনো পুলিশে অভিযোগ জানাতে পারিনি। সুস্থ হলে থানায় অভিযোগ জানাব।


এ বিষয়ে অভিযুক্ত রিপন মোল্যা মুঠোফোনে বলেন, কয়েকদিন আগে একটা গ্রাম্য সালিশে ইবাদকে নিয়ে আলোচনা হয়। এর বাইরে কিছু ঘটেনি। শোনা যাচ্ছে ইবাদ নাকি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এটা সাজানো নাটকও হতে পারে।


বুলবুলের নেতৃত্বে চাঁদা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে বরং মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।


অভিযোগের বিষয়টি জানতে শ্যামকুড় ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বুলবুলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও ফোনটি রিসিভ হয়নি।


তবে মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমি এ বিষয়ে এখনো কিছু জানি না। খোঁজখবর নিয়ে দেখব। যদি দলের কেউ অপরাধী প্রমাণ হয়ে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। তবে আমি আপনার থেকে বিষয়টি জানলাম প্রথম। আমি খোঁজ নিয়ে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বিএনপি কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবে না। আমরা এ বিষয়ে কঠোর।


উল্লেখ্য, রিপন মোল্যা ও মশিয়ার মোল্যার বিরুদ্ধে আগেও চাঁদার দাবিতে একাধিকবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও ব্যবসায়ীদের হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আছে। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর দুই ব্যক্তিসহ পাঁচজন চাঁদা না পেয়ে এক মাছের ঘের মালিকের ওপর হামলা করেন; ভাঙচুর ও লুটপাট করেন তার মৎস্য ঘেরে। পরে এ ঘটনার প্রতিবাদ, চাঁদাবাজমুক্ত পরিবেশে ব্যবসা এবং নিরাপত্তা চেয়ে মানববন্ধন করেন ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় জনসাধারণ।
Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال