"

পরিবর্তন আসছে এনআইডিতে




একজন নাগরিক তার ঠিকানা পরিবর্তন করার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) ভোটার এলাকাও পরিবর্তন হয়ে যায়। এতে নাগরিকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এজন্য ভোটার এলাকা ও বর্তমান ঠিকানা আলাদা করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অর্থাৎ, এনআইডিতে তিনটি ঠিকানা (বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ও ভোটার এলাকা) যুক্ত হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, এনআইডির বর্তমান ঠিকানাই ভোটার এলাকা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে কোনো কারণে বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন হলে ভোটার এলাকাও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আর ভোটার এলাকা পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার ফলে অনেকেই নিজের এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সম্প্রতি ভোটার এলাকা পরিবর্তন বা স্থানান্তর এবং এনআইডি সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে ইসি। সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন সমস্যা পর্যালোচনা করে ঐ কমিটি একটি সুপারিশ করেছে। কমিটি প্রধান ও ইসির উপ-সচিব এম মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সুপারিশ অনুমোদনের জন্য তোলা হয়েছে। কমিশনের অনুমোদন পেলেই তা বাস্তবায়ন করা হবে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত ভোটার স্থানান্তর কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ঐ সময়ে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ব্যতিত স্থানান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় না।

এছাড়া বর্তমানে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রবাসেই নিবন্ধন করা হচ্ছে। তাদের বর্তমান ঠিকানা বসবাসরত দেশে হলেও কার্ডের পেছনে বাংলাদেশে যে এলাকার ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত আছেন, সে এলাকার ঠিকানা উল্লেখ থাকে। অথচ তাদের নিবন্ধন ফরম পূরণের সময় প্রবাসের ঠিকানার তথ্যও সংগ্রহ করা হয়। এক্ষেত্রে বর্তমান ঠিকানা ও ভোটার এলাকা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।

কর্মকর্তারা আরো বলেন, নাগরিকদের বিভিন্ন দাফতরিক প্রয়োজন ও বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে এনআইডির ঠিকানা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তা সম্ভব হয় না। কারণ ভোটার স্থানান্তরের সঙ্গে এনআইডির বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তনও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 

এক্ষেত্রে কেস টু কেস নথিতে উপস্থাপন করে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনক্রমে স্থানান্তর কার্যক্রমে অনেক সময় প্রয়োজন হয় এবং নাগরিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হন। এই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সেবা সহজীকরণ কমিটি ঐ সুপারিশ করেছে। কমিটির সুপারিশে এনআইডি নেয়ার সময় বা নতুন ভোটার হওয়ার সময় নির্ধারিত ফরমে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার পাশাপাশি ভোটার এলাকা লিপিবদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটার তথ্য সংগ্রহের সময় ভোটারের তিনটি ঠিকানা থাকবে (বর্তমান বা যোগাযোগ, স্থায়ী ও ভোটার ঠিকানা)। একজন নাগরিকের তিনটি ঠিকানা একই হতে পারে অথবা একাধিক হতে পারে। এনআইডির পেছনে বর্তমান বা যোগাযোগের ঠিকানা উল্লেখ থাকবে। এটা দেশে বা প্রবাসের ঠিকানা হতে পারে। ভোটার ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা ডাটাবেজে থাকবে। তবে ভোটার ঠিকানা মুদ্রিত ভোটার তালিকায় উল্লেখ থাকবে। এতে তিন ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। 

প্রথমত, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও এনআইডির ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য ভোটার মাইগ্রেশন প্রয়োজন হবে না। বর্তমান বা যোগাযোগের ঠিকানা সংশোধন করলেই হবে। ফলে ভোটার তালিকায় কোনো প্রভাব পড়বে না।

দ্বিতীয়ত, বর্তমানে একই ব্যক্তি একাধিকবার ভোটার স্থানান্তর করেন। ডাটাবেজে বর্তমান ঠিকানা ও ভোটার এলাকা ফিল্ড একটাই হওয়ার কারণে কোনো ব্যক্তির দাফতরিক প্রয়োজনে ঠিকানা পরিবর্তন করতে হলে বাধ্য হয়ে তাকে ভোটার স্থানান্তরও করতে হয়। আবার নির্বাচনের আগে আগে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় স্থানান্তরে চাপ বেড়ে যায়। 

এক্ষেত্রে তিনি নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে স্থানান্তর করছেন নাকি দাফতরিক প্রয়োজনে স্থানান্তর করছেন, তা বোঝার উপায় থাকে না। ডাটাবেজে তিনটি ঠিকানা থাকার ফলে আবেদনের উদ্দেশ্য বোঝা যাবে এবং বিভিন্ন নির্বাচনের আগে বারবার স্থানান্তর রোধ করা সম্ভব হবে। এমনকি ভোটার স্থানান্তর কতবার করা যাবে, তা নির্দিষ্ট করা সম্ভব হবে।

তৃতীয়ত, তিনটি ঠিকানা থাকার ফলে প্রবাসী নাগরিকদের এনআইডির পেছনে বর্তমান বা যোগাযোগের ঠিকানা হিসেবে প্রবাসের ঠিকানা উল্লেখ থাকবে। এতে প্রবাসীদের সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে এবং তারা অগ্রাধিকারভিত্তিতে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন সেবা পাবেন।
Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال