"

এই সরকার শেখ হাসিনার ফাঁসির ব্যবস্থা করে ফেলেছে : নানক


আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক অভিযোগ করেছেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বর্তমান সরকার শেখ হাসিনাকে ফাঁসিতে ঝুলানোর পরিকল্পনা করছে। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছে।”

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে অজ্ঞাত স্থান থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

গোপনে থাকা গণহত্যায় অভিযুক্ত এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “আজ আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। জনগণ আজ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে—বাংলাদেশ আজ কোথায় দাঁড়িয়েছে? দেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে?”

নানক আরও বলেন, “দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে অপসারণ করা হয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশ তার উন্নয়নের গতিপথ হারিয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত বাংলাদেশ আজ চরম অস্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের জীবনের মূল্য যেন সবচেয়ে কম হয়ে গেছে।”

নানক বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালাচ্ছে। তাদের হত্যা করছে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল মানুষদের ওপর অবর্ণনীয় দমন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই সব মৃতদের অনেকেই জীবিত আছে। টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মামলার বাদী বানানোর পরিকল্পিত কৌশলের গোমরও ফাঁস হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার রাজনৈতিকভাবে প্ররোচিত হয়ে শেখ হাসিনাকে যে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাও ইতিমধ্যে প্রমাণিত। বাদবিচারহীনভাবে চলছে গণগ্রেপ্তার। এই সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তার ওপর অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে।’

তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সমাজকে গভীর সংকটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার গতিমুখ বদল করে একত্ববাদিতা কায়েম করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস মুছে ফেলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রাচার থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলো বাদ দিয়েছে। জয় বাংলা জাতীয় দিবসের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।’

আজ বাংলাদেশ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘একদিকে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এরফলে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানুষের জীবন।’

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল তারই অংশ হিসেবে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে। লাগামহীন দুর্নীতির প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করতে এমন নীলনকশা কি না আমরা জাতির কাছে সেই প্রশ্ন রাখছি। মূলত এর মধ্যে সরকারের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। সব জায়গায় আওয়ামী লীগের ভূত দেখার মতো দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরকারের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা সচিবালয়ের ভিডিও ফুটেজ জাতির সামনে প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি। নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানাচ্ছি।’

এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেউ মুছে ফেলতে পারবে না উল্লেখ করে নানক বলেন, ‘বৃথা চেষ্টা না করে জনদুর্ভোগ কমান। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। সব হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ বিচার করুন।’

তিনি বলেন, ‘যেখানে সেখানে মবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর শিক্ষাজীবন আজ বিপন্ন। ছাত্রলীগ করার কারণে তাদের পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। বিনা কারণে যাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তাদের স্বপদে বহাল করতে হবে। ইজতেমা ময়দানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জাতি জানতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে আবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ওরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দিতে চায়। আমাদের আর বসে থাকার সুযোগ নেই। আসুন প্রতিবাদ করি, প্রতিরোধ করি। ওরা দেশপ্রেমিক নয়, ওরা জাতির পিতা মানে না। আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। জয় বাংলা।’


Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال