ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা মনমোহন সিং ৯২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৫১মিনিটে নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসে (এআইআইএমএস) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ভারতের মুক্ত বাজার অর্থনীতির জনক ও অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ হিসেবে খ্যাতির শীর্ষে থাকলেও দেশটির ইতিহাসে একমাত্র "পুতুল প্রধানমন্ত্রী" হিসেবে বিরোধীদের কট্টর সমালোচনা সইতে হয়েছে তাকে।
মূলত, ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু ইতালীয় বংশদ্ভূত সনিয়া গান্ধী কংগ্রেস সভানেত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হবার দাবিদার থাকলেও বিরোধীদের "বিদেশী" সমালোচনার কারণে তিনি সেই দায়িত্ব নিতে চাননি। তখন বিকল্প মনমোহন সিং এবং প্রণব মুখার্জীর নাম প্রস্তাবিত হলে কংগ্রেস সভানেত্রীর সমর্থনে মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
কংগ্রেসের বিরোধীদের অভিযোগ, মনমোহন সিং মূলত সোনিয়ার পুতুল হিসেবে নির্দেশ পালন করতেন। ফলে তাকে "পুতুল প্রধানমন্ত্রী" হিসেবেও সমালোচনায় মুখর থাকত বিরোধী দলগুলো।
এদিকে, আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনমোহন সিং ভারতের প্রথম ও একমাত্র অহিন্দু প্রধানমন্ত্রী। মনমোহনের জন্মস্থান বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের চকওয়াল জেলার গ্রাম গাহ। জন্ম ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর।
চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে প্রথমে স্নাতক এবং ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন মনমোহন। ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক, তারপর ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাফিল্ড কলেজ থেকে ডি’ফিল করেন তিনি।
এরপর ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত একটানা জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন শাখায় কাজ করেন। ১৯৬৯ সালে মনমোহন শুরু করেন শিক্ষকতা। দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সে যোগ দেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অধ্যাপক হিসেবে। ১৯৭২ সালে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হন। ১৯৭৬ সালে হন কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থসচিব।
১৯৮২ সালে মনমোহনকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর করা হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সেই পদে ছিলেন।
১৯৮৭ সালে অর্থনীতি বিষয়ক স্বাধীন সংস্থা সাউথ কমিশনের মহাসচিব পদে বসেন মনমোহন। সেখানেই ১৯৯০ পর্যন্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে দেশে ফিরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। ১৯৯১ সালের মার্চে তিনি ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশন (ইউজিসি)-র চেয়ারম্যান পদে বসেন।
১৯৯১ সালের জুন মাসে নতুন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাও তার সরকারে মনমোহনকে অর্থমন্ত্রী করেন। স্বাধীন ভারতের অর্থনীতির ইতিহাসে সেটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলোর একটি। ১৯৯১ সালে কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ার পর কংগ্রেসের হয়ে প্রথমবার রাজ্যসভা সদস্য নির্বাচিত হন মনমোহন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান তিনি। ১৯৯৯ সালে একবার লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জিততে পারেননি।
২০০৪ সালে তিনি ভারতের ১৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কংগ্রেস জোটের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন মনমোহন।