"

আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতিকে সঙ্গী করতে হবে


মানুষ বা রাষ্ট্রের চূড়ান্ত পরিচয় কী? এ প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, অন্যান্য সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাঙালি মুসলমান ও হিন্দুদের ঐক্যের মধ্যেই বাংলাদেশের ভিত্তি নিহিত। বাঙালি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় পরিচয়ের রাজনীতির প্রয়োজন নেই; তারা রাষ্ট্রকে স্পষ্ট করে তোলে। রাষ্ট্রের দুটি দিক: রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের বিকাশ এবং রাষ্ট্র গঠন। বাঙালি মুসলিম আকাঙ্ক্ষা থেকে রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছে; কিন্তু রাষ্ট্রকে অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষ থাকতে হবে। রাষ্ট্রকে বাঙালি মুসলমান ও হিন্দু-সবাইকে সমান বিবেচনা করতে হবে। বাঙালি মুসলমান তাদের অধিকার আদায়ের জন্য বারবার সংগ্রাম করেছে। ১৯৪৭ সালে তারা পাঞ্জাবি আধিপত্যের কারণে সেটা অর্জন করতে পারেনি এবং ১৯৭১ সালে মুজিববাদ তাদের আবদ্ধ করে রেখেছিল। এমন একটি রাষ্ট্রের সন্ধানে তারা ২০২৪ সালে আবার জেগে ওঠে, যেটা বৈষম্যহীন, আরও বেশি গণতান্ত্রিক এবং আরও বেশি সমতার। এই লড়াই ধর্ম নিয়ে নয়, যদিও ধর্মীয় অনুপ্রেরণা রয়েছে-এটি ধর্মীয় শাসনের জন্য নয়, সাম্য ও ন্যায়বিচারের জন্য।


মাহফুজ আলম বলেন, ১৯৭১ সালের পরে একটি সমঝোতার প্রয়োজন ছিল এবং জামায়াতের সঙ্গে সমস্যাটি ২০১৪ পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হওয়া উচিত ছিল না। এটি আগেই সমাধানের প্রয়োজন ছিল। এখন আওয়ামী লীগের প্রশ্ন তুলে জাতীয় ঐক্যকে আরও দুর্বল করার তৎপরতা চলছে। আমি মনে করি ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে শাহবাগ-হেফাজত দ্বন্দ্ব উবে গেছে। তবে সাংস্কৃতিক লড়াই রয়ে গেছে। শাহবাগ-হেফাজত দ্বন্দ্ব কেবল রাজনৈতিক নয়; এটি একটি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব। মুজিববাদীরা এই সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বকে স্থায়ী করেছে। তারা জাতির মধ্যে বিভাজন ধরে রাখছে এবং বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি অংশের সঙ্গে মিলে অন্য অংশকে সত্যিকার অর্থে বোঝার চেষ্টা না করে প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে আখ্যা দেয়। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য দ্বন্দ্বের এই চক্রটি মুজিববাদীরা সাজিয়েছে।


যে ধরনের সংবিধানের আমরা আশা করছি তা বিভাজনমূলক হবে না; এটা অধিক অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো শাহবাগ-হেফাজত দ্বন্দ্বের সমাধান করা; কিন্তু এর শিকড় সাংস্কৃতিক রাজনীতির গভীরে রয়েছে। শুধু একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে এটি সম্পূর্ণরূপে সমাধান সম্ভব না। তবুও আমরা এই বিভেদ দূর করার চেষ্টা করব। বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতি কোন পথে চলবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বাস্তববাদী এবং সংবেদনশীল মানুষ। আমরা সভ্যতাগত মিশ্রণ এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর পক্ষে কথা বলছি, যা আমাদের মধ্যে এশিয়া থেকে তুরস্ক এবং চীন থেকে কোরিয়া ও জাপানে সভ্যতাগত সংলাপের মাধ্যমে যুক্ত করে। আমি যখন সামুদ্রিক সম্পর্কের কথা বিবেচনা করি, তখন আমরা দেখতে পাই আমাদের প্রভাব শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে হওয়া পররাষ্ট্রনীতিকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু বাংলাদেশে বিভক্তিমূলক রাজনীতি সমন্বিত জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে। আমাদের নেতারা জাতীয় পরিচয় বা ঐক্যের প্রশ্নে একত্রিত হতে পারেননি, যা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিকে প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় চরিত্রের অনুপস্থিতির কারণে আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে স্বচ্ছতা ও আলোচনার অভাব আছে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুবই আজ্ঞাবহ এবং দলীয় রাজনীতি দ্বারা চালিত। এটি পরিবর্তনের জন্য আমাদের অবশ্যই জাতীয় সমঝোতা করতে হবে। নতুন দৃশ্যপটে আমরা জনগণের কূটনীতির পক্ষে কথা বলি এবং বাংলাদেশের জন্য আমি জনগণের কূটনীতি পদ্ধতির একটি রূপরেখা দিয়েছি। আমাদের জনগণের কূটনীতির পাশাপাশি সামরিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কূটনীতি দরকার।
Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال