সংবাদ সম্মেলনে স্বর্ণা অভিযোগ করে বলেন, আমার মাকে মিথ্যা অপবাদে ধরে নিয়ে গেছে। এই দিন দেখার জন্য কি কষ্ট করে আন্দোলন করেছিলাম? এ জন্যই কি আমরা মার খেয়েছি? এখানে আমরা যারা আছি, তারা সবাই আশিয়ান সিটির ভুক্তভোগী। কারো পৈত্রিক সম্পত্তি, কারো ঘরবাড়ি, জোরধবর দোস্তি করে দখল করে নিয়েছে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
তিনি বলেন, আমাদের সংবাদ সম্মেলন ছিল আশিয়ান সিটির মালিক নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার বিষয়ে। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তারা আমার মাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছেন। ১৬ জুলাই থেকে আমি আন্দোলন করতেছি। আমি একজন শিক্ষার্থী। আমার নেতৃত্বে হাজারো ছাত্রী আন্দোলন করেছে। অথচ আজ আমার মা সেভ না, আমি কোথায় যাব? কার কাছে বলবো। আমরা এত সুন্দর আন্দোলন করে একটা দেশ পেয়েছি, সেখানে কেন আমার মা সেভ থাকবে না? আমার বাবার গায়ে আজকে হাত দেওয়া হয়েছে। আমায় মাকে যখন আমি সেভ করতে কিছু আমার গায়ে ধাক্কা দিয়েছে। আমি একজন মেয়ে আমাকে একজন ছেলে এসে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। কেন?
তিনি আরো বলেন, আমার মায়ের পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ছিল। আমার মা না থাকার কারণে আমি সংবাদ সম্মেলন কন্টিনিউ করছি। আমার মাকে মিথ্যা অপবাদে ধরে নিয়ে গেছে। এই দিন দেখার জন্য কি কষ্ট করে আন্দোলন করেছিলাম?
গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ খলিল মনসুর বলেন, খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক নারী সম্পাদক আনোয়ারা বেগম মিলিকে মৎস্য ভবনের আশপাশ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি একটি মামলার সন্দেহভাজন আসামি। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এসময় তিনি মায়ের পূর্ব নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যটি পড়ে শোনান। তিনি বলেন, আমি আনোয়ারা মায়ার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস স্বর্ণা, ২০০৯ সালে খিলক্ষেত থানার বড়ুয়া দক্ষিণ পাড়ায় আমাদের এক বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে আশিয়ান সিটি। এই জমির দলিল, নামজারি, খাজনাসহ সকল কাগজপত্র আমার মায়ের নামে। এই জমি নিয়ে বিবাদের জেরে আমার মামাকে তারা হত্যা করেছে। আমার মা আদালতে গেছে তাদের বিরুদ্ধে। আদালত ওই জমির উপর ইনজাংশন দিয়ে বলেছেন, কোনো পক্ষ কিছু করতে পারবে না।
গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই আমার মায়ের সেই জমি সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে অস্ত্রের মুখে দখল করে নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে খিলক্ষেত থানায় গিয়ে কোনো লাভ হয়নি। আশিয়ানের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত নেয়নি। বিতর্কিত এই আশিয়ান সিটির মালিক ভূমিদস্যু নজরুল ইসলাম ভূইয়া এতোদিন আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে দখলবাজির মাধ্যমে জমির অবৈধ ব্যবসা করেছে। তখন জমি খেকো এই নজরুলের মূল পৃষ্ঠপোষক ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তরিক আহমেদ সিদ্দিক, গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই কর্মকর্তা মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদ, পুলিশের বেনজির, হারুণ, মনির, আসাদুজ্জামান মিয়া, হাবিব, আওয়ামী লীগ নেতা মৃত সাহারা খাতুন, তোফাজ্জল চেয়্যারম্যান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মফিজ, নাঈমসহ আরো অনেকে।
আশিয়ান সিটির ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মধ্যে যারা ওই এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা হলেন- আব্বাস আলী, ওলীউল্লাহ, রাশেদুল,নুরুল্লাহ, ফাহিম, আনিস, জিহাদ, নুরুল, সাইফুল, জাহিদুল, মজিবর, রিয়াজসহ আরো অনেকে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই নজরুল এখন বিএনপির ছত্রছায়ায় আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। খিলক্ষেত, উত্তরখান, দক্ষিণখান, ও বড়ুড়া মৌজায় প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে ভিটেমাটি ছাড়া করা হচ্ছে। স্থানীয় সাধারণ মানুষ তাদের হাতে জিম্মি। বংশ পরম্পরায় পূর্ব পুরুষের বসতভিটা, জমি জমা, খামার, ফসলি জমি, সরকারের খাসজমি, জলাশয় ভরাট করে তারা অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ এর প্রতিবাদ করতে গেলেই নজরুল বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হয়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, নজরুল বাহিনীর অত্যাচারের বহু ছবি আপনাদের আমরা দেখাতে পারবো। এই সন্ত্রাসী বাহিনী সারাদিন আশকুনা, কাউলা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, বউরা, খিলক্ষেত এলাকায় অস্ত্রহাতে টহল দেয়। এলাকাবাসী কিংবা ভুক্তভোগীরা এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে শত ক্ষোভ-বিক্ষোভ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।
পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পরও পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের নিরাপত্তায় কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
অভিযোগ আছে আশিয়ান সিটি পুলিশ, মাস্তান, ক্যাডার, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনকে প্রচুর টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। আর রাজউক তাদের অবৈধ কাজ বন্ধ রাখার নোটিশ দিয়েই ক্ষান্ত। রাজউকের তরফ থেকে ব্যক্তিগত মালিকানার জমিজমা দূরে থাক সরকারি খাস জমি রক্ষায় এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ১ ডজনেরও বেশি ছাত্র হত্যা মামলার আসামি হয়েও নজরুল, সাইফুল, জাহিদুল আছে বহাল তবিয়তে। আর আন্দোলন করে আমরা পথে পথে ঘুরছি। আমরা আমাদের পৈত্রিক জমি ফেরত চাই, কেনা প্লট বুঝে পেতে চাই। এ জন্য আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ চাই।
Tags
জাতীয়