১৪ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি কিশোর নাজি আল-বাবার স্বপ্ন ছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো আন্তর্জাতিক ফুটবলার হওয়ার। অধিকৃত পশ্চিম তীরে জন্ম নেওয়া নাজির জীবন ছিল ফুটবলময়। তবে গত ৩ নভেম্বর ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ফুটবল মাঠেই থেমে গেল তার স্বপ্ন ও জীবন।
সেদিন ছিল আরেকটি সাধারণ দিন। সকালে নাজি স্কুলে যায়, আর তার বাবা নিদাল বেথলহেমে কাজে যান। দুপুরে বাবা-ছেলে একসঙ্গে বাড়ি ফিরে দুপুরের খাবার খান। খাওয়ার পর নাজি তার বাবার কাছে ফুটবল খেলতে যাওয়ার অনুমতি চায়। খেলাধুলার জায়গাটি তাদের বাড়ির কাছেই, যেখানে তার দাদার একটি মুদি দোকান রয়েছে।
দুপুর ৩টার দিকে নাজি কিছুক্ষণের জন্য বাড়ি ফিরে আসে। তারপর আবার মাঠে খেলতে যায়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তার চাচাতো ভাই দৌড়ে এসে জানায়, ইসরায়েলি সেনারা মাঠে গুলি চালিয়েছে, নাজি গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
নাজির বাবা নিদাল এবং চাচা সামির দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে ১০ জন ইসরায়েলি সেনা দাঁড়িয়ে ছিল। তারা নাজির কথা জানতে চাইলে সেনারা তাদের মারধর করে। নিদালের হাত বাঁধা হয়, তাকে মাটিতে ফেলে রাখা হয়, এবং এতটাই মারধর করা হয় যে তার হাত ভেঙে যায়।
সে অবস্থাতেই নিদাল দেখতে পান, ইসরায়েলি সেনারা নাজির মরদেহ নিয়ে যাচ্ছে। সেনারা তাদের দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে বলে, না হলে তাদেরও মেরে ফেলা হবে। পরিবার পরে জানতে পারে, নাজির মরদেহ হালহুলের আবু মাজেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ফরেনসিক রিপোর্টে দেখা যায়, নাজির শরীরে চারটি গুলি লেগেছিল—একটি পেলভিসে, একটি পায়ে, একটি হার্টে এবং একটি কাঁধে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও তাকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।
ছয় ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম ছিল নাজি। তার মা সামাহার আল-জামারা বলেন, ‘নাজি ছিল আমাদের পরিবারের শক্তি।
সে তার বয়সের তুলনায় অনেক পরিণত ছিল। যখন সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল, মনে হলো আমার একটি অংশ চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি।’
নাজির হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছিল আলজাজিরা, কিন্তু কোনো উত্তর মেলেনি।
নাজি আল-বাবার মৃত্যু শুধু একটি কিশোরের জীবনের ইতি নয়, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের দুঃখ-দুর্দশার প্রতীক। তার স্বপ্ন, ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা এবং অকালমৃত্যু বিশ্বকে ফিলিস্তিনে চলমান সংকটের ভয়াবহতার দিকে নজর দিতে বাধ্য করে। সূত্র: আলজাজিরা।
Tags
আন্তর্জাতিক