সূর্যের আলো ও তাপ নিয়ন্ত্রণ করা বিশেষ ছাউনির নিচে সারি সারি ফুটেছে টিউলিপ। কোনোটা সাদা, কোনোটা লাল, সঙ্গে রয়েছে হলুদ-গোলাপিও। একেকটি ফুলের বাহারি রঙে রাজসিক সৌন্দর্যের এ ফুল ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। শীতের দেশের এই টিউলিপ তৃতীয়বারের মতো আবারও ফুটেছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
ফুলের এমন সৌরভ দেখতে দর্শনার্থীরা ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। কেউ ছুঁয়ে দেখছেন আবার কেউ প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তুলছেন। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে যেন জমিনে নেমে এসেছে একখণ্ড রংধনুর গালিচা।
জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্তের দর্জিপাড়া গ্রামে দুই ধাপে সফলতার পর তৃতীয়বারের মতো আবারও ফুল চাষ হয়েছে। ফুল ফোটার পর এই ফুল দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নানা বয়সের দর্শনার্থীরা।
দর্শনার্থীরা জনপ্রতি ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে টিউলিপ বাগানে ঢুকছেন। তাদের সুবিধার্থে ক্ষুদ্র চাষিরা বাগানের পাশে স্থাপন করেছেন ‘হোটেল টিউলিপ’ নামে একটি রেস্তোরাঁ। যেখানে ফুল দেখতে আসা মানুষ খেতে পারবেন তেঁতুলিয়ার স্থানীয় গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবার। সেই সঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের অবস্থানের জন্য করা হয়েছে আবাসনের ব্যবস্থা।
বাহারি রঙের টিউলিপে মজেছে নানান বয়সী পর্যটকরা। গতবারের মতো এবারও দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় টিউলিপের একখণ্ড নেদারল্যান্ডস হয়ে উঠেছে। বাহারি রঙের ভিনদেশি টিউলিপ দেখতে সকল বয়সের পর্যটকের ঢল নেমেছে জেলার সীমান্তবর্তী টিউলিপ গ্রাম দর্জিপাড়ায়।
বিভিন্ন দেশে দেড়শরও বেশি প্রজাতির টিউলিপ চাষ হয়। এর মধ্যে ১৯ প্রজাতির ২৫ হাজার বীজ বোনা হয়েছে দর্জিপাড়া গ্রামে। গত বছর লাভের মুখ দেখে তেঁতুলিয়ার মাটিতে এ ফুল নতুন করে চাষ করেছেন উদ্যোক্তারা। এতে করে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি অর্থনৈতিক আয়ে ঘুরেছে তাদের সংসারের চাকা।
সাধারণত কানাডা, কাশ্মীর, তুরস্কের মতো শীত প্রধান দেশে চাষ হয় এমন ফুলের। তবে শীতপ্রবণ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার আওতায় টিউলিপ চাষ হচ্ছে। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি টিউলিপ চাষের জন্য আদর্শ।
বেসরকারি সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন (ইএসডিও) উদ্যোগে ১৬ জন নারী কৃষাণী নিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রায় এক একর জমিতে চাষ করা হচ্ছে এ ভিনদেশি ফুল।
পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করতে ফিতা কেটে টিউলিপ গার্ডেনের উদ্বোধন করেন, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন, (পিকেএসএফ) এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান ও ইএসডিওর পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার দম্পতি। সহ ইএসডিও-পিএকেএসের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও টিউলিপ চাষিরা উপস্থিত ছিলেন। দর্শনার্থী ও পর্যটকের সমাগমে টিউলিপ বাগান দেখতে ব্যাপক সমাগম ঘটে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে জেলার সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম দর্জিপাড়ায় রোপণ করা হয় টিউলিপ ফুল। মাত্র ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে কয়েক সারিতে ফুল ছড়িয়ে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে টিউলিপ। এবার ১৯ প্রজাতির টিউলিপের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সূর্যোদয় (হলুদ), স্ট্রং গোল্ড (হলুদ), জান্টুপিঙ্ক (গোলাপি), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিস্টিক ভ্যান ইজক (গোলাপি), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল শেড) ও গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)।
নারী কৃষাণী মোছা. আয়শা সিদ্দিকা বলেন, আমরা তৃতীয়বারের মতো নেদারল্যান্ডের রাজকীয় টিউলিপ চাষ করেছি। টিউলিপ ফুল দেখতে এ অঞ্চলে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটতে শুরু করেছে। যদিও এ বছর সব গাছে এখনো ফুল আসেনি, ফুল ফুটতে শুরু করেছে। আশা করছি গত দুই বছরের মতো এবারও টিউলিপের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ও হাসিতে মুগ্ধ করবে।
টিউলিপ চাষি ও উদ্যোক্তা সুমি আক্তার বলেন, ‘বর্তমানে বাগান থেকেই একেকটি ফুলের স্টিক ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া একেকটি টবসহ ফুল ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। অল্প সময়ের মধ্যে হওয়া এই ফুল চাষ করে আমরা লাভবান হব বলে আশা করছি। আর এবার লাভবান হলে ভবিষ্যতে আমরা আরও বড় পরিসরে টিউলিপ চাষ করতে চাই।’
দিনাজপুর থেকে বাবার সঙ্গে টিউলিপ ফুল দেখতে এসে আশামনি বলেন, টিউলিপের সৌন্দর্যে মোহিত হয়েছি। আসলে এর সৌন্দর্যের অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ভাষা পাচ্ছি না। এতো ভালো লেগেছে। আমি যখনই শুনেছি তেঁতুলিয়ায় টিউলিপের চাষ হচ্ছে, তখন থেকেই মাথায় আসে এ টিউলিপ আমাকে দেখতে হবে। টিউলিপ বাগানে এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি।
ইকো টুরিজম চালু করতে টিউলিপ ফুল ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ইএসডিও প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ শহীদ উজ জামান।
দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উপার্জনমুখী করতে টিউলিপ ফুল অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে জানান পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন।
এ গ্রামে গত ২০২২ সালে পরীক্ষামূলক টিউলিপের চাষ হয়। এবার ১৬ জন চাষি ১০০ শতক জমিতে এ ফুলের চাষ করেছেন। তবে বিগত দুই বছরের সাফল্যে এবারও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়েছে। এ ফুল চাষ লাভজনক হওয়ায় এবার টিউলিপ চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা।
Tags
সারাদেশ