যশোর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান পিকুল এবং তাঁর সহযোগীদের অনিয়ম, লুটপাট, দুর্নীতি তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পিকুলের সহযোগী চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তলব করা হয়েছে।
তারা হলেন– জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, সহকারী প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান ও অফিস সহায়ক সরোয়ার উদ্দিন।
গত ১৪ জানুয়ারি দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আল আমিন স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ ইস্যু করা হয়। এতে বলা হয়, সড়ক-মহাসড়কের সরকারি হাজার হাজার গাছ বিক্রি ও বিভিন্ন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা লোপাট, নিয়োগ বাণিজ্য, জমি ইজারা ও দোকান বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তদের দুদকে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানের ভাষ্য, দুদক আমাদের বক্তব্য শুনবেন।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইফুজ্জামান পিকুল। এর পর ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন। দুই দফায় প্রায় সাড়ে ৭ বছর তিনি চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, যশোর-খুলনা মহাসড়ক, যশোর-ঝিনাইদহ ও যশোর-নড়াইল মহাসড়ক এবং আঞ্চলিক সড়কের হাজার হাজার গাছ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন পিকুল ও তাঁর সহযোগীরা। প্রকল্প বরাদ্দে ২৫ শতাংশ কমিশন দিতে হতো। ভুয়া প্রকল্প তৈরি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মাণ প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দ থাকলেও জেলা পরিষদ থেকে একাধিকবার বরাদ্দ দিয়ে টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। প্রতিবছর শীতবস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ ছাড়াও জেলা পরিষদের মালিকানাধীন যশোর শহরের খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও যশোর টাউন হল মাঠসংলগ্ন মার্কেটের দোকান বরাদ্দের নামে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ঘুষ আদায় করা হয়েছে।
অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত ২ ডিসেম্বর অফিস আদেশে প্রধান সহকারী (ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা) লুৎফর রহমান সরদারকে নড়াইল জেলা পরিষদে ও অফিস সহায়ক সরোয়ার উদ্দিনকে মেহেরপুর জেলায় বদলি করা হয়েছে।