"

সাইফের ‘আক্রমণকারী’কে ঘিরে ভারতের রাজনীতিতে উত্তাপ

 




বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খানের ওপর হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি করেছে মুম্বাই পুলিশ। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে মুম্বাইয়ের দাদর এলাকা থেকে শরিফুল ইসলাম শেহজাদ নামের সেই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। মুম্বাই পুলিশের ডিসিপি দীক্ষিত গেড়াম বলেন, ‌‘ওই অভিযুক্ত বাংলাদেশি, এ বিষয়ে আমার ডাউট আছে। তবে ওর কাছে কোনো ভারতীয় নথি নেই। আমাদের সন্দেহ ও বাংলাদেশি হতেও পারে।’ এরপরই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে সাইফের হামলাকারী একজন অনুপ্রবেশকারী, বাংলাদেশি!   

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি হয়ে ভারতে ঢুকে মহারাষ্ট্রে গিয়েছিলেন শরিফুল ইসলাম। আর এই তথ্য ঘিরে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়েছে। বিতণ্ডায় জড়িয়েছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।


এই ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলছেন, ‌‘আজ বাংলাদেশিরা এখান দিয়ে ঢুকে রেশন কার্ড, আধার কার্ড সব করে নিয়ে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ছে এবং দেশবিরোধী ও সমাজবিরোধী কাজকর্ম করছে।’ 

তৃণমূলকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘এখানকার পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইচ্ছা করে বাংলাদেশিদের ঢুকতে দিচ্ছে। কিছু বললেই বিএসএফ-এর দোষ দেয়। সারা দেশ থেকে বাংলাদেশি তাড়ানোর অভিযান শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজ্যের পুলিশ ধরে তাদের পুশব্যাক করছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কোনো হেলদোল নেই। কারণ এদের ভোটার বানিয়ে রাখা হয়েছে ভোট পাওয়ার জন্য দেশের সুরক্ষাকে বিসর্জন দিয়ে।’

অন্যদিকে, এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলছেন, ‘দেশের (ভারত) যেকোনো প্রান্তেই কোনো অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়ুক, যারা অবৈধভাবে আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে, তার মূল ব্যর্থতা সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের। কারণ সীমান্ত পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। তারা ব্যর্থ। দ্বিতীয়ত সেন্ট্রাল আইবি, অশুভ শক্তির গতিবিধি দেখা যাদের কাজ, কেন্দ্রীয় এজেন্সি, তারাও ব্যর্থ।’

সব মিলিয়ে সাইফ আলি খানের ওপর হামলার ঘটনায় অনুপ্রবেশ ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির পারদ চড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উদ্দেশে বিজেপি বিধায়ক অমরনাথ শাখা বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গকে একটা বাংলাদেশ বানানোর চক্রান্ত। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এটাতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে। পশ্চিমবঙ্গে পুরো কারখানা চলছে, বাংলাদেশিকে ঢোকাবার কারখানা। সম্পূর্ণভাবে রাজ্য সরকারের উদাসীনতা নয়, রাজ্য সরকারের সক্রিয় মদতে আজ এই ধরনের জঙ্গি কার্যকলাপ বিভিন্ন জায়গায় ঘটাচ্ছে এই বাংলাদেশিরা।’

শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও সাইফের ঘটনা নতুন ইস্যু হয়ে উঠেছে। সামাজিক মাধ্যম এক্স’র এক পোস্টে বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য বলেন, ‘মুম্বাই পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে সাইফ আলি খানকে আক্রমণ করা ব্যক্তি মোহাম্মাদ শরিফুল ইসলাম। সে বাংলাদেশি। এখানে সে একজন অবৈধ বাসিন্দা। সে একটি হিন্দু পরিচয় নিয়ে এখানে থাকছিল। ইন্ডি জোটের কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসের মতো রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ভোট ব্যাংক হিসাবে এইসব অবৈধ অভিবাসীদের তোষণ করে এলেছে। তারা এই ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। হিন্দুদের অপমান করার জন্য তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’

তবে এই ‘দোষারোপের খেলা’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ও অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা। সামাজিক মাধ্যমের এক্স’র এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমার বিনীত আবেদন দয়া করে এই দোষারোপের খেলা বন্ধ করুন। পুলিশ তাদের কাজ ভালোভাবেই করছে। আমরা অবশ্যই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ও মহারাষ্ট্রের এইচএম দেবেন্দ্র ফড়নবীশের এই প্রতিকারমূলক পদক্ষেপের জন্য প্রশংসা করি। বিষয়টিকে আর জটিল না করাই ভালো। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হোক, যত তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল।’

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’র বিষয়টিতে রাজনৈতিক রং লেগেছে। দেশটির মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’র গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিরিটি রায় এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘নেপাল বা ভুটানের মানুষদের কি আমরা অনুপ্রবেশকারী বলি? সেক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই বা বিষয়টিকে কেন অনুপ্রবেশ হিসেবে দেখা হবে? ইউরোপের মতো বিষয়টিকে স্বাভাবিক করে দেওয়া যায়। কিন্তু এদেশের রাজনীতি তা হতে দেবে না।’

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, এবিপি আনন্দ

Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال