"

আলুর ভালো ফলন হলেও বড় লোকসানে কৃষকরা

 


বছরের নতুন আলু। ছবি : কালবেলা

গত মৌসুমে আলুচাষিরা ভালো ফলন ও দামে সন্তুষ্ট হয়েছিল। গত মৌসুমের মতো লাভের আশায় এবার ধারদেনা ও ঋণ করে বেশি পরিমাণে আলু চাষ করে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কৃষকরা। এই মৌসুমে আলুচাষিরা কেজিতে ১২০-১৩০ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়ে কিছুটা লাভবান হলেও বর্তমানে আলুর কেজি ১৩-১৭ টাকা হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। তাতে আলু চাষিদের লাভের আশা তো দূরের কথা, ধারদেনা ও ঋণ পরিশোধ নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল, মধুপুর, লাহিড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার আলু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত মৌসুমে আলু চাষে বেশি পরিমাণে লাভ হওয়ার কারণে এই মৌসুমে অনেক আলু চাষ করেছে কৃষকরা। সার, কীটনাশক ও বীজের দাম অনেক বেশি হওয়ায় বর্তমান বাজারে আলু বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে কৃষকের। গত বছর আলুতে প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৩০-৪০ হাজার টাকা। তবে এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৫০-৬৫ হাজার টাকা।


আলু চাষি নাঈম জানান, গত বছর আলুর বীজের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা পর্যন্ত। এ বছরে বীজের দাম বেড়ে ১২০ টাকা পর্যন্ত এসেছিল। এতে গত বছরের তুলনায় আলুর উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হওয়ার কারণে বর্তমানে কৃষকরা প্রতি বিঘা জমিতে লোকসান হচ্ছে প্রায় ২০-৩০ হাজার টাকা। এ বছর জমি থেকে কৃষকরা আলু বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা এবং সর্বনিম্ন আলু বিক্রি হয়েছে ১২ টাকা।

আলু চাষি ফারুক জানান, এ বছর দুই বিঘা জমিতে গ্র্যানুলা জাতের আলু চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। জমিতে আলু পেয়েছি ১৩০-১৩৫ মণ। তাতে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। এ বছর লোকসান হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। ভালো ফলন হওয়ার কারণে এত দাম পেয়েছি। না হলে আরও বেশি লোকসান হতো।


আলু চাষি সাদেকুল জানান, আমি এবার ঋণ নিয়ে আলুর চাষ করেছিলাম লাভের আশায়। তবে এবার আলুর বাজার দর অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এখন লোকসান কোথা থেকে দিব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ২০২২ সালে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। পরের বছর ২০২৩ সালে ৩০০ হেক্টর কমে ২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। তবে গত বছরের দাম পেয়ে চলতি বছর আবারও ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ বেড়েছে আরও ৩০০ হেক্টর।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল কালবেলাকে জানান, এ এলাকার কৃষক যখন একটি ফসলে লাভ পান, তখন অন্যরাও সেটাতেই ফসলে প্রতি ঝোঁকেন। চলতি বছরে আলুর ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। এ বছর আলুর উৎপাদন বেশি পরিমাণে হওয়ার কারণে সরবরাহ কম হচ্ছে তাই দাম কমেছে আলুর। তবে আগাম আলু চাষিরা ভালো দাম পেয়ে লাভবান হয়েছে। এবার উৎপাদন খরচ বেশি ও বেশি পরিমাণে আলু উৎপাদনের কারণে কৃষকরা লোকসান হচ্ছে।

Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال