"

আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসবে বিএনপি: এএফপি

 




বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আগামী নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি আগামী বছরের মার্চের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকতে পারে।


প্রতিবেদনটি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে নেওয়া এক সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। এতে বলা হয়, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে মতানৈক্য স্পষ্ট হচ্ছে। বিএনপি মনে করছে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজন করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা দরকার, যাতে দেশ একটি গণতান্ত্রিক সরকার পায়।


নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি এএফপির সঙ্গে কথা বলেন, যেখানে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এই বাস্তবতায় নির্বাচন আয়োজন কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। তার ভাষায়, “অনেকেই আমাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন বিলম্বের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলছে, কিন্তু সত্য হচ্ছে, আমরা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নিতে চাই।”


নাহিদ ইসলাম ছিলেন শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান মুখ। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগ দিলেও, সম্প্রতি তিনি পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি গঠন করেছেন। তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত এই দল ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে চায়।


রাজনৈতিক সংস্কারের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নাহিদ বলেন, “বাংলাদেশে সত্যিকারের পরিবর্তনের প্রয়োজন থাকলেও, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই এতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তরুণেরা জীবন দিয়ে যে পরিবর্তনের বীজ বুনেছে, সেটির যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।” তার মতে, গণঅভ্যুত্থানের পর দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করাই তাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব, আর এই কারণেই এনসিপির যাত্রা শুরু হয়েছে।


তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি আসন্ন নির্বাচনে সরকার গঠন নাও করতে পারি, তবু এমন একটি রাজনৈতিক শক্তির সূচনা করেছি, যা আগামী কয়েক দশক ধরে প্রভাব বিস্তার করবে। কেউই জানত না যে, এমন একটি অভ্যুত্থান হবে, কিন্তু সেটি হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের বিজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে এই নির্বাচনই সবকিছু নয়—আমাদের লক্ষ্য এই আন্দোলনকে ৫০ বা ১০০ বছর পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা।”


এনসিপি নিজেদের এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, যেখানে গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় বিশ্বাসী সব মতাদর্শের মানুষের জন্য জায়গা থাকবে। তবে নতুন দল গঠনের পর থেকেই কিছু অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ডানপন্থীদের চাপে পড়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সমকামী অধিকারের জন্য কাজ করা একজন সদস্যকে সরিয়ে দেওয়া হয়।


এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা সব মতাদর্শের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই, তবে আমাদের দেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার সঙ্গে কিছু বিষয় মানিয়ে চলতে হবে।” এনসিপিতে এখনো যথেষ্ট বৈচিত্র্য রয়েছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, “আমরা দলে নারীদের সামনে এনেছি, সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে জায়গা দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য, যাতে প্রতিটি নাগরিক তার অধিকার ভোগ করতে পারে।”


রাজনীতির মঞ্চে এনসিপির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন, অভ্যন্তরীণ মতাদর্শগত বিভাজন এবং ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে আগামীর রাজনীতিতে এনসিপির অবস্থান স্পষ্ট হবে।



Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال