" পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বড় ভূখন্ড পাচ্ছে বাংলাদেশ, এ যেন দক্ষিণ তালপট্টির জবাব! "

পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বড় ভূখন্ড পাচ্ছে বাংলাদেশ, এ যেন দক্ষিণ তালপট্টির জবাব!

 

বাংলাদেশের আয়তন দিন দিন বাড়ছে। পদ্মা, মেঘনা ও উপকূলীয় বদ্বীপ অঞ্চলে গত কয়েক বছরে জেগে উঠেছে প্রায় ৫০টিরও বেশি নতুন চর ও দ্বীপ। এসব নতুন ভূখণ্ড মানুষের বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠছে, যা বাংলাদেশকে দিচ্ছে একটি গোটা দেশের সমান বিস্তৃত অঞ্চল—এ যেন দক্ষিণ তালপট্টির হারানোর জবাব সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে।

স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের আয়তন ধীরে ধীরে বাড়ছে। নদীর পলি জমে, বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরে, বিশাল বিশাল চর জেগে উঠছে। একসময় যেসব এলাকা ছিল শুধু ডোবার চর, এখন তা স্থায়ী ভূখণ্ডে রূপ নিচ্ছে। বহু চর ভরা জোয়ারেও আর ডুবে না, বরং দেশের মানচিত্রে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিচ্ছে। অনেকেই বলছেন, ভারতের ছেড়ে দেওয়া অতিরিক্ত পানিই যেন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের আশীর্বাদ।

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ। হিমালয় থেকে নেমে আসা নদীগুলো—যেমন গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা—প্রতিবছর প্রায় এক বিলিয়ন মেট্রিক টন পলি বহন করে এনে বঙ্গোপসাগরে ফেলে। যদিও এর একটি বড় অংশ গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যায়, তবু কিছু পলি জমে জমে নতুন চর গঠনের পথ তৈরি করছে।

১৯৭০ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠেছিল দক্ষিণ তালপট্টি, যেটি নিয়ে শুরু হয়েছিল ভারত-বাংলাদেশ বিরোধ। বাংলাদেশ দাবি করেছিল দ্বীপটি তাদের, এমনকি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্যাটেলাইট ছবি ও তথ্য-প্রমাণও পেশ করেছিলেন। কিন্তু ভারত সেখানে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে ও বিএসএফ চৌকি বসিয়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। পরে কিছু সময়ের জন্য দ্বীপটি নো-ম্যানস ল্যান্ড হিসেবে বিবেচিত হলেও, ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে তা ভারতের হয়ে যায়। কিন্তু এখন আর সেই দ্বীপের অস্তিত্ব নেই, সমুদ্রের নিচে বিলীন হয়ে গেছে।

তবে প্রকৃতি যেন সেই হারানো দ্বীপের বদলা নিচ্ছে অন্যভাবে। বিগত কয়েক বছরে কুকরি-মুকরি চর, ওসমান চর, কামাল তারুয়া চর, চড় গাঙ্গুলিয়ার মতো নতুন ভূখণ্ড জেগে উঠেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ৩২ কিলোমিটার ভূমি নদীভাঙনে হারালেও নতুন করে ১০০ বর্গ কিলোমিটার জমি চর হিসেবে ফিরে পাচ্ছে বাংলাদেশ।

এই চরগুলোর কিছুতে ইতোমধ্যেই গড়ে উঠেছে স্থায়ী অবকাঠামো। বিশেষজ্ঞদের মতে, হিমালয় থেকে আসা পলি যদি সঠিকভাবে ধরে রাখা যায়, তবে আগামী কয়েক দশকে ২ লাখ ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত নতুন ভূখণ্ড মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হতে পারে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের সমান একটি নতুন ভূখণ্ড বাংলাদেশ পেতে পারে শুধুমাত্র প্রাকৃতিকভাবে!

এভাবেই, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি আর জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কাকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ যেন পলি জমার এই প্রাকৃতিক চক্রের মধ্য দিয়ে এক নতুন ভূখণ্ডিক জাগরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ভিডিও দেখুন: https://shorter.me/abvmo

Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال