রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টকশোতে বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে বিস্তৃত মন্তব্য করেন। তিনি তিনটি প্রধান কারণ তুলে ধরে বলেন, এই নেতাদের ‘ন্যাচারাল লিডারশিপ কোয়ালিটি’ নেই।
গোলাম মাওলা রনি বলেন,“পলিটিশিয়ানের এক নম্বর যোগ্যতা ন্যাচারাল লিডারশিপ কোয়ালিটি। একজন পলিটিশিয়ান তার একজন কর্মী বা ভোটারের চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে এর পেটে ভাত নেই।”
তিনি আরও বলেন,“রাজনীতির যে পোর্টফোলিও এবং পোস্টগুলো রয়েছে, পথগুলো রয়েছে, এখানে যারা থাকবেন তাদের এক নম্বর যোগ্যতা হলো লিডারশিপ কোয়ালিটি, ন্যাচারাল লিডারশিপ কোয়ালিটি। তারা জনগণের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাবেন। জনগণের রাজনীতি করবেন এবং জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা ধারণ করবেন।”
নেতৃত্বগুণের অভাব নিয়ে তিনি বলেন,“একজন পলিটিশিয়ান, সে যতই লেখাপড়া কম জানুক, যতই তাকে ঘৃণা করেন না কেন, সে তার একজন কর্মী বা ভোটারের চোখের দিকে তাকিয়ে সে বুঝতে পারে এর পেটে ভাত নেই। এর পকেটে টাকা আছে আমি ওখান থেকে চাঁদা নিতে পারবো, আর আমার পকেট থেকে টাকা দিতে হবে। এই জিনিসটা রাজনীতিবিদরা বুঝেন।”
তার মতে,“এখন এখানে যারা আছেন, এদের কারোরই এই যোগ্যতাটা নেই। কোন পলিটিক্যাল লিডারশিপ এদের এই যে এখন, যার উপদেষ্টা মন্ডলী ইনক্লুডিং প্রধান উপদেষ্টা, তিনি সহ তাদের এই পলিটিকাল লিডারশিপ নেই।”
গোলাম মাওলা রনি বলেন,“দুই নম্বর হলো যে, এদের কারোর জীবনে কোন সংবেদনশীল কর্মকাণ্ড, মানবতার জন্য, আত্মমানবতার জন্য নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে একেবারে মানুষের জন্য কর্মকাণ্ড করেছেন,যেটা রাজনীতিবিদরা করেন।”
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন,“দুপুরে খেতে বসছেন, অসহায় গ্রাম থেকে দরিদ্র মানুষ আসছে, তাকে নিয়ে খেতে বসছেন এক টেবিলে। বা গ্রাম থেকে একটা লোক আসছে, আত্মীয় দরিদ্র আত্মীয়, তাকে বিছানার উপরে তিনি রেখে, তিনি যে ফ্লোরিং করছেন, ছেলে মেয়েকে শিখিয়েছেন।”
রনি বলেন,“এদের আচার আচরণে, এরা সবাই নব্য অভিজাত। এদের কারো আচরণে ওই জিনিসটা আমার কাছে মনে হয় না, যে এইরকম একটা মানবতা মূলক ক্যারেক্টারিস্টিক তাদের রয়েছে।”
নেতৃত্ব নির্বাচনে জনগণের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,“তিন নম্বরে যেটা হলো, যে এদের কাউকেই দেখলে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় না, দে কুড বি মাই লিডার। আমি যে একজনকে নেতা বানাব। একজন নেতা মানে কি? সে মাথার তাজ, মাথার মুকুট, সবাই মাথায় করে ঘুরে,মানে রনি ভাইয়ের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম।”
তিনি বলেন,“নেতা আছে রনি ভাই, কোন সে নেতা রনি ভাই। এই যে, আমাকে যদি পছন্দ না হয়, পিছনে তো লোকজন এ কথা বলবে না, কিন্তু এদের সামনে নিয়ে আমি যে বলব, অমুকে আমার নেতা আমার এরকম মনে হয় না। এটা আমার ভুল হতে পারে।”
রনি আরও বলেন,“আমি এদের সামনে রেখে, মাথার উপর বসিয়ে, কদমবুচি করব, স্লোগান দিব, নেতা মানবো এরকম মনে হয় না। তারা বোধহয় বুঝতে পেরেছে যে জনগণ তাদেরকে একটু মনে করছেনা। এজন্য তাদের জনগণের প্রতি ভীষণ রাগ হয়ে গেছে।ভীষণ রাগ হয়ে তারা প্রথমদিকে যে সকল পাবলিক অরিয়েন্টেড কর্মকাণ্ড করার চেষ্টা করেছিলেন, সেই জায়গা থেকে তারা ইউটার্ন করে ফেলেছেন।”
ক্ষমতায় আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,“এমনি তারা ক্ষমতায় আসবেন এটা তো তাদের কখনোই চিন্তায় ছিল না। স্বয়ং ফেরেশতা জিব্রাইল এসে তাদেরকে ওই জায়গার উপর বসায় দিয়েছেন।কিন্তু বসিয়ে দেয়ার পর তো তাদের একটা প্ল্যান তারা নিঃসন্দেহে করেছে যে, আমরা ৯০ দিনে এই কাজগুলো করব, বা হান্ড্রেড ডে তে এই কাজগুলো করব।”
“এখন তারা সেই ভালো চিন্তা থেকেও সরে গেছেন। মনে হচ্ছে, তারা পরিণীতির কথা ভাবছেন যে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে আমাদের কি হবে।”
বিভিন্ন দল নিয়ে মত পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,“তারা এই সময়ের মধ্যে বন্ধু নির্বাচনে বেশ কয়েকবার ট্রাক চেঞ্জ করেছে।প্রথমে জামাত, পরে বিএনপি, এরপর ডিজিএফআই-নির্ভর ছোট দল-সবাইকেই পাল্লায় মেপে ফেলছে। মাই গড! মির্জা ফখরুল সাহেব আর ‘ঝুরা পার্টি’কে একই কাতারে ফেলছে। ভেরি ডেঞ্জারাস গেম।”
সূত্র:https://shorter.me/Z0pEx
Tags
রাজনীতি