বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন আয়োজন কতটা বাস্তবসম্মত,সে প্রশ্ন তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। তিনি বলেন, “এখন যার হাতে ক্ষমতা, সেই এলাকায় মব জাস্টিস করবে।”
সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো নির্বাচন ডাকলে, প্রার্থীরাই চাইবেন নির্বাচন না হোক।
গোলাম মাওলা রনি বলেন,“আমার কাছে তো মনে হচ্ছে যে, এখন যদি যেকোন নির্বাচন ডাকে, যে প্রার্থী তারা সরকারের হাতে পায়ে ধরবে যে- ‘আব্বাগো, মাগো নির্বাচন করতে চাই না। তাড়াতাড়ি নির্বাচন বাতিল করেন।’”তিনি বলেন, এ অবস্থার কারণ মূলত রাজনৈতিক সহিংসতা এবং নির্বাচনী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা।
“এখন যেখানে এতটা মব জাস্টিস হচ্ছে, সেখানে যদি পাঁচজন প্রার্থী থাকে, যার হাতে ক্ষমতা যে এলাকায়, সেই সেখানে মব জাস্টিস করবে। ফলে অন্য চারজন প্রার্থীর তার জীবন নিয়ে টানাটানি। তার ঘরবাড়ি, কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি তছনছ হয়ে যাবে।”
রনি বলেন,“ ৩০০ আসনে যদি জাতীয় নির্বাচন হয়, তো স্থানীয় নির্বাচন হয়ে যাবে প্রায় ৭০০০ আসনে। তো ৭০০০টি পয়েন্টে আইন-শৃঙ্খলা কোন পর্যায়ে চলে যাবে, এটা এই বর্তমান যারা আছে, উনারা এটা কল্পনাই করতে পারে না।”
নির্বাচনের জটিলতা বোঝাতে রনি তুলনা করেন গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের সঙ্গে।তিনি বলেন,“গ্রামীণ ব্যাংক চালানো ভেরি ইজি। গ্রামের গরীব মানুষ, তাদের ২০০০ টাকা আমি নিজে দেখছি ’৮১–’৮২ সনে, ২০০০ টাকা দিবেন- দেওয়ার আগে এক মাস আগ পর্যন্ত তাদেরকে লেফাইট করিয়েছে। মহিলারা লেফরাইট করে, ছেলেরা লেফাইট করে।”
তিনি আরও বলেন,“এককজন ম্যানেজারকে ১২০০–১৩০০ টাকা করে, এমএ পাস,জগন্নাথ থেকে পাশ করছে-ওই আমলে সনে ১১০০, ১২০০, ৮০০, ৯০০ টাকা দিয়া এটা গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজার ভাড়া করে। এরকম ২০০০ টাকা করে লোন দিয়ে, আবার সেই লোন প্রতি সপ্তাহে ৩০ টাকা করে, ৪০ টাকা করে ফেরত দিতে হবে।দিতে না পারলে, পুকুরে লাভ দিয়া ঝাঁপ দিতে হইতো। অনেক জায়গায়, অনেক এই লোন পরিশোধ নিয়ে ঘটনা ঘটছে।”
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, নির্বাচন একটি কঠিন প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক কাজ। তার ভাষায়-একটা চেয়ারম্যান ইলেকশন করা, একটা উপজেলা নির্বাচন করা, একটা এমপি নির্বাচন করা এত সহজ নয়। এটা খুবই কঠিন একটা কাজ।
তো, যার জন্য সেই কাজের জন্য যে পরিবেশ দরকার, প্রতিবেশ দরকার, যা কিছু দরকার- এরকম যদি ১ হাজারটা উপকরণ ধরেন, একটা নির্বাচন করার জন্য আপনাকে ১০০০টি উপকরণ দরকার।
এই ১০০০টি উপকরণের একটি উপকরণ এখনো সরকারের পক্ষে নেই, নির্বাচন করার পক্ষে নেই। এবং এই নির্বাচন করা সম্ভবই না, অসম্ভব বিষয়।”
গোলাম মাওলা রনির বক্তব্য অনুযায়ী, দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বাস্তবতায় এখন কোনো ধরনের নির্বাচন আয়োজন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও অনুপযুক্ত। নির্বাচন আয়োজনের জন্য যেসব মৌলিক শর্ত ও প্রস্তুতি দরকার, তার কিছুই বর্তমান সরকারের পক্ষে নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সূত্র: