" দেশের ভেতরের খেলায়ও হিজাব নিষিদ্ধের কথা ভাবছে ফ্রান্স, হতাশ মুসলিম অ্যাথলেটরা "

দেশের ভেতরের খেলায়ও হিজাব নিষিদ্ধের কথা ভাবছে ফ্রান্স, হতাশ মুসলিম অ্যাথলেটরা

 

ফ্রান্সের ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি ব্যবস্থার অধীনে দেশটির সরকারী চাকরীজীবি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিদেশের মাটিতে ফ্রান্সকে প্রতিনিধিত্বকারী অ্যাথলেটরা ধর্মীয় প্রতীক পরিধান করতে পারেন না। এ আইনের কারণে খ্রিস্টানদের ক্রুশ, ইহুদিদের কিপ্পা, শিখদের পাগড়ি কিংবা মুসলিমদের হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল।

তবে ঘরোয়া ক্রীড়া আয়োজনে এ নিয়মে শিথিলতা ছিল। জাতীয় স্পোর্টস ইভেন্টগুলোতে অ্যাথলেটরা ধর্মীয় প্রতীক পরতে পারবেন কি না- এতদিন এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল ফেডারেশনের হাতে। তবে এতদিন পর্যন্ত ফেডারেশনের এ ক্ষমতা বিদ্যমান থাকলেও ভবিষ্যতে আর না থাকার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ফ্রান্স এরই মধ্যে এ আইনের সংস্কারের কথা ভাবছে। সে আইন অনুসারে, দেশের সকল পেশাদার কিংবা ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় অ্যাথলেটদের মাথা ঢেকে রাখা নিষিদ্ধ করা হবে। অর্থাৎ এ আইন পাশ হলে, মুসলিম অ্যাথলেটরা আর হিজাব পরে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন মুসলিম অ্যাথলেটরা।  

আইনের পক্ষে যুক্তি হিসেবে দাবি করা হয়েছে, এটি হলে ধর্মনিরপেক্ষতা আরও বেড়ে যাবে এবং এটিকে চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করছেন। অন্যদিকে সমালোচকরা হতাশা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, মুসলিম নারী অ্যাথলেটদের প্রতি দৃশ্যমান বৈষম্যের সর্বশেষ নিদর্শন হতে যাচ্ছে এটি।

সম্ভাব্য এ আইন প্রসঙ্গে হতাশা প্রকাশ করে সিলভি এবেরেনা নামের এক মুসলিম নারী ভারোত্তোলক বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে, তারা প্রতি মুহূর্তে একটু একটু করে আমাদের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা খুবই হতাশাজনক, কারণ আমরা খেলাধুলা চালিয়ে যেতে চাই।’

৪৪ বছর বয়সী এ নারী ভারোত্তোলক গত বছর দেশটির ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় ৮০ কেজির ক্যাটাগরিতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ধর্মান্তরিত এবেরেনা ৪ বছর আগে ভারোত্তোলনে নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু সামনে হিজাব নিষিদ্ধ হলে তাঁর খেলা চালিয়ে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়তে যাচ্ছে দেখেই এমন হতাশার কথা জানান তিনি।

এরই মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এ আইনটি সিনেটে পাস হয়েছে এবং শিগগির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ভোটাভুটির জন্য পাঠানো হবে। 

আইনের সমর্থকদের মতে, ফ্রান্সে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি জিহাদি হামলা হয়েছে। আর এটার জন্য ‘ইসলামপন্থীদের’ দায়ী করে তাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে এমন আইন পাশের পক্ষে মত দিচ্ছেন তারা।

সমর্থকদের এমন ধারণার জবাবে সমালোচকরা ২০২২ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের কথা উল্লেখ করছেন। যে রিপোর্টে খেলাধুলায় উগ্রবাদের অস্তিত্ব মেলেনি।

এর আগে গত মাসে অলিম্পিকে জুডো চ্যাম্পিয়ন ফরাসি তারকা টেডি রিনের এমন সব বিতর্কে সময় নষ্ট করতে মানা করতে বলেছিলেন। ‘একটি ধর্মকে আক্রমণ করার পরিবর্তে সবার প্রতি সমান দৃষ্টিতে তাকানোর’ আহ্বান জানান তিনি।

সে সময় রিনের এ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দ্বিমত পোষণ করে দেশটির ডানপন্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রতেললিও হিজাবকে ‘আনুগত্যের প্রতীক’ হিসেব উল্লেখ করেন।

ভারোত্তোলক এবেবেনা জানিয়েছেন, ফেডারেশনের অনুমোদন সাপেক্ষেই তিনি মাথায় কাপড় দিতেন। কোনো সহকর্মী এখন পর্যন্ত

তাঁর কোনো সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। তিনি আশা করছেন, এমন আইনের পথে হাঁটবে না ফ্রান্স, ‘খেলা আমাদের একত্রিত করে। এটা আমাদের একে অন্যকে জানতে সাহায্য করে। আমাদের কুসংস্কারগুলো কাটাতে সাহায্য করে।’ 

Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال